‘চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাঁয়তারা হচ্ছে’
বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস সমস্যা: চেম্বারের বৈঠকে সিটি মেয়র ও এমপি লতিফ
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে সম্প্রতি মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসে লাইটারেজ জাহাজ বুকিং বিষয়ে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তিসহ এ খাতের অস্থিতিশীলতা নিরসন ও শৃঙ্খলা আনতে একটি গ্রহণযোগ্য এবং সমন্বিত বুকিং ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আয়োজিত সভায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম, নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বৈঠকে অংশ নেন।
চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ এর সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম. আবদুল লতিফ, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কনভেনর মোঃ নুরুল হক, সংশ্লিষ্ট জাহাজ মালিক ও সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিটি মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন-দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সাথে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কোন স্বার্থান্বেষীমহল এই সুনাম অক্ষুন্ন করুক তা আমরা চাই না। বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসে জাহাজের সিরিয়াল অনুযায়ী ও নিয়মমাফিক হতে হবে, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি আরো বলেন-একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির কারণে এই সেক্টরে নানা বিশৃঙ্খলা তৈরী হচ্ছে। ফলে অনেক জাহাজ মালিক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা এ ধরণের কর্মকান্ড চাই না।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম. আবদুল লতিফ বলেন-গত ১৫ বছর ধরে এই আসনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ২৩টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কার্যক্রম একদিনের জন্যও কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এখন নতুন করে অনেকেই নৌ-পরিবহন সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের দীর্ঘদিনের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাঁয়তারা করছে। তিনি আরো বলেন-এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০০৫ সালের দিকে চেম্বারের উদ্যোগেই গঠিত হয়েছিল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (ডব্লিউটিসিসি)। তখন থেকে সুবিধাভোগীরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থে ব্যর্থ হওয়ায় বিভিন্ন চক্রান্ত করে চেম্বার থেকে আলাদাভাবে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল গঠন করেন। সেই স্বার্থান্বেষীমহলই সাধারণ জাহাজ মালিকের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার অধিক বকেয়া রেখে ডব্লিউটিসিসি চলমান সিরিয়াল প্রথার বিপরীতে আলাদাভাবে নতুন জাহাজ সিরিয়াল ব্যবস্থাপনা চালু করেছে। ফলে তৈরী হয়েছে জাহাজ মালিকদের সংগঠনসমূহের এক বিপরীতমূখী অবস্থান। বিরাজমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা তৈরীর মত শঙ্কা তৈরী হবে। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনসাধারণ ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সরকার আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি বিবেচনা করছে বলেই নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবসায়ীদের মতামত জানতে এবং সমাধানের জন্য এসেছেন। সরকার অর্থনীতির গেইটওয়ে তথা বন্দর সচল রাখার ব্যাপারে সোচ্চার এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন মর্মে তিনি সভায় উল্লেখ করেন।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন-সরকার আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি হ্যান্ডেল করছে। এজন্য আমরা নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে বিবাদমান সকল পক্ষের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে জাহাজ বুকিং এর জন্য সকল পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটির নেতৃত্বে আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন সিরিয়াল দেয়া হবে এবং পূর্বের বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একই সাথে জাহাজের সিরিয়াল নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে সেজন্য আমরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ও অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলাপ করেছি।
নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন-কমিটি গঠনের পূর্বে সকলপক্ষকে নিয়ে সভা করেছি আমরা। উক্ত সভার আলোকে সকল সমস্যা সমাধানে নতুন কমিটি আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে। এখন থেকে জাহাজ বুকিং এর সময় নির্ধারিত ৬০% এবং পণ্য খালাসের পূর্বে অবশিষ্ট ৪০% ফি প্রদান করতে হবে। এছাড়াও বিবাদমান বিভিন্ন সমস্যা আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে নিরসন সম্ভব না হলে তা আরবিট্রেশনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে এবং ন্যায্য পাওনা আদায়ে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন-চট্টগ্রাম বন্দর ও পণ্য পরিবহন নিয়ে এ ধরণের জিম্মিদশা তৈরী করা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে চিটাগাং চেম্বার আমদানিকারক, সাধারণ ব্যবসায়ী এবং দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি বিবেচনা করে সোচ্চার ছিল। তিনি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নৌ-পরিবহন কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এফবিসিসিআই এবং চিটাগাং চেম্বারের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্তিকরণের আহবান জানান। এছাড়াও উক্ত সভায় ডব্লিউটিসি এর নেতৃবৃন্দ জাহাজ বুকিং ব্যবস্থা এবং স্বার্থান্বেষীমহল কর্তৃক বকেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.