চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী

২৬৫

মাসব্যাপী ২৯তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২ এর উদ্বোধন করা হয়েছে। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র উদ্যোগে মঙ্গলবার (৩১ মে) বিকেলে রেলওয়ে পোলোগ্রাউন্ড মাঠে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি এমপি ফিতাকেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।

চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এম. এ. লতিফ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি এমপি বলেন- চট্টগ্রাম দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফ লাইন। তাই এই অঞ্চলকে আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার। আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করতে হবে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে চট্টগ্রামসহ ব্যবসায়ীরা প্রশস্ততার পথ দেখাবে। ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাস্তবতার নিরিখে হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অপরিসীম অবদান রয়েছে। তাই তাঁদের সব প্রয়োজন সরকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫শত ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে বলা যায় ‘ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ’।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন-চট্টগ্রাম ও বন্দরের ইতিহাস হাজার বছরের। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করতে হলে বাণিজ্যের সকল উপাদান চট্টগ্রামে থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে। কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রথম। মিরসরাই ইকোনমিক জোনে ১৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কাজেই চট্টগ্রামের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে। তিনি চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ১৩ টন ওজন নিয়ন্ত্রণের বিষয় বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান। একই সাথে সুন্দর চট্টগ্রাম মহানগর গড়ে তুলতে নগরবাসীর সচেতনতা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন সিটি মেয়র।

বিশেষ অতিথি এম. এ. লতিফ এমপি বলেন-চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের অবকাঠামো উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে চট্টগ্রামের সাথে সারা পৃথিবীর যোগাযোগ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে দেশের উন্নতি। স্থিতিশীল সরকার থাকার কারণে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা থাকলে বাংলাদেশ ৮টি উন্নত দেশের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে। টিসিবি’র মাধ্যমে সরকার ভর্তুকিমূল্যে সাধারণ জনগণের কাছে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছে। তিনি চট্টগ্রামে মানসম্পন্ন সাইলো নির্মাণের দাবী জানান।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পিপিএম বলেন-বাংলাদেশ এক অবাক বিস্ময়ের দেশ। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিগত দু’বছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রবাহ চলমান ছিল। তিনি চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পগুলোর প্রসংগ উল্লেখ করে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির হাব হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-গত ২৮ বছর ধরে চেম্বার দেশীয় বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও পরিচিতির সুবিধার্থে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯তম মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি মেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যুর দাবী জানান, যেখানে সারা বছরব্যাপী সব ব্যবসায়ী সংগঠন মেলা আয়োজন করতে পারেন। চেম্বার সভাপতি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করা, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দপ্তরের ক্ষমতায়ন, মিরসরাই ইকোনমিক জোন দ্রুত বাস্তবায়ন, ব্লু ইকোনমি নীতিমালা প্রণয়ন এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে পণ্য বহুমূখীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর এবং চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২২ কমিটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ ও সাবেক পরিচালকবৃন্দ, সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিসিসি কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মাসব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পোলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রতিদিন সকাল ১০.০০ টা থেকে রাত ১০.০০ টা পর্যন্ত চলবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.