যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে প্রতিদিন ৩ জন, বছরে এক হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়

যুক্তরাষ্ট্রের সেই পুলিশের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়ার দাবী

৪৩

গত ১৮ জুলাই দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রে ডাকাতদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত কলেজ ছাত্র ইয়াজ উদ্দিন রমিমের সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন নিহতের বড়ভাই রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রশ্ন করেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করলেও আমেরিকান পুলিশ কাস্টডি থেকে হ্যান্ডকাপ পড়া অবস্থায় কিভাবে সে পালিয়ে গেলো ? শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বাইডেন প্রশাসনের কাছে ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
চট্টগ্রামের সন্তান কলেজ ছাত্র ইয়াজ উদ্দিন রমিমের হত্যার প্রতিবাদে ‘আমরা চট্টগ্রামবাসী’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এই শ্লোগানে মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ।
চৌধুরী ফরিদ বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যে পড়ালেখা করতে আমেরিকায় গিয়েছিল, পড়ালেখার পাশাপাশি একটি পেট্রোল পাম্পে চাকরি করতো সে, ‘গত ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।’
‘ভাবতে অবাক লাগে, কষ্ট হয়, আমেরিকার মতো দেশে বাংলাদেশের সন্তানদের আজ কোনো নিরাপত্তা নেই। কিন্তু সেই আমেরিকা আজ বাংলাদেশের মানবাধিকারের কথা বলে, অথচ তাদের দেশে কোনো মানবাধিকার আছে কিনা আমাদের প্রশ্ন ?
যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ প্রবণতার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ছয় বছরে আমেরিকায় ২১ হাজার মানুষ পুলিশের ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যার শিকার হয়েছেন। এটা কি কল্পনা করতে পারেন? গত জানুয়ারিতে পুলিশের গুলিতে ফটিকছড়ির এক কৃতি সন্তান নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮৯ জন, ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৪০ জন, ২০১৯ সালে ১০৯৭ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ১৫২ জন, ২০২১ সালে ১ হাজার ১৪৫ জন ও ২০২২ সালে ১ হাজার ১১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে।’
‘এভাবে পুলিশের গুলিতে গড়ে প্রতিদিন তিনজন মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে। সেই আমেরিকা বলে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। আমরা চাই বিশ্বের সব জায়গায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হোক, শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়। বাইডেন প্রশাসনকে বলব, প্রতিবছর এক হাজার ও প্রতিদিন তিনজন মানুষ যে পুলিশের গুলিতে মারা যায়, আগে তাদের বিচার করুন। আপনারা যে মানবাধিকারের কথা বলেন, নিজের দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করুন।’
চৌধুরী ফরিদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের র‌্যাবের বিরুদ্ধে আপনারা (আমেরিকা) স্যাংশন দেন, আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আপনাদের পুলিশের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়ার দাবি করছি। আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে স্যাংশন দেন, সেভাবে আপনাদের নিজেদের পুলিশের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া উচিৎ। ইতোমধ্যে জেনেছি, ইয়াজ উদ্দিনকে হত্যার দায়ে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সে নাকি পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে। এটা কি আমরা মানতে পারি? সভ্য দেশে কি এটা সম্ভব? আমেরিকাতে এটা সম্ভব? ‘
‘সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনে এক প্রার্থীকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই এর তীব্র নিন্দা জানাই। এই মারধরের আমেরিকাসহ ১২টি দেশ নিন্দা জানাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মানুষ নিহত হচ্ছে এর কোনো নিন্দা জানাচ্ছে না। তাই তাদের বলবো প্রকাশ্যে দিবালোকে যেখানে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় সেখানে প্রতিবাদ জানান।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটো বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ আমেরিকা। দিনে-দুপুরে সেখানে পাখির মতো মানুষ হত্যা করা হয়। সেসব হত্যাকান্ডের বিচার করা হয় না। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে ১০০ জন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে। যে আমেরিকায় এত কিছু হচ্ছে, তারা আবার বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।’
ইয়াজ উদ্দিন রমিমের বড় ভাই রিয়াজ আহমেদ আসিফ বলেন, ‘আমেরিকার মতো উন্নত দেশে ডাকাতদের গুলিতে আমার ছোট ভাইকে মরতে হলো। পুলিশ কাস্টডি থেকে যে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সে পালিয়ে গেছে। পুলিশ কাস্টডি থেকে একজন হত্যাকান্ডের আসামি কীভাবে পালিয়ে যায়? আমেরিকার মতো দেশে বাংলাদেশের একজন ছাত্র নিরাপত্তা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করে। আমি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমদাদুল ইয়াজ, যুব নেতা শোয়েব ইসলাম, মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, শৈবাল দাশ, সাদ্দাম হোসেন সহ অন্যরা।
গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্টলুইস শহরে কর্মস্থল বিপি গ্যাস স্টেশনে ইয়াজ উদ্দিন রমিমকে (২২) গুলি করে হত্যা করা হয়। সেন্টলুইস শহরের পার্কওয়ে সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে স্নাতক শেষ করে কমিউনিটি কলেজে কম্পিউটার সাইয়েন্সে পড়ালেখা করছিলেন রমিম। পাশাপাশি বিপি গ্যাস স্টেশনে কাজ করতেন। রমিমের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার করেরহাট গ্রামে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.