বাবুল আক্তারই প্রধান আসামি: মিতু হত্যায় পিবিআইয়ের চার্জশিট
বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় স্বামী ও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। সেই সঙ্গে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে আমরা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। মামলায় বাবুল আক্তারকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে মামলাটি তদন্ত করেছি। পিবিআই কখনও পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে তদন্ত করে না। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা মামলাটির তদন্তভার পেয়েছিলাম। আড়াই বছরের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে সবরকমের তথ্যপ্রমাণ আমরা পেয়েছি তাদের আসামি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো: কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা অনেক বড় একটা কেস ডকেট, আমরা এখনও কেস ডকেট পুরোপুরি দেখতে পারিনি। শুধু এটুকু বলতে পারি যে- বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র আমাদের কাছে জমা হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী আমরা সেটা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠাব। ওই আদালত সিন করে, যেহেতু এটা হত্যা মামলা, আদালত সেটা সেশন জজ আদালতে পাঠাবেন। এরপর পরবর্তী বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় ওই বছরের ৬ জুন জঙ্গিরা জড়িত দাবি করে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে ঘটনাটির গতিপথ পাল্টে যায়। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবা মোশাররফের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলবে।
অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.