মিয়ানমার সীমান্তে ইতিপূর্বের মত পরিস্থিতির আবার উদ্ভব হবেনা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চসিকের একুশে সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ

১৩

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের পক্ষে আর কোন রোহিঙ্গাকে গ্রহণ কিংবা আশ্রয় দেয়া সম্ভবপর নয়, মিয়ানমার সীমান্তে ইতিপূর্বে যেধরণের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল, আশা করব সেই ধরণের পরিস্থিতি আবার উদ্ভব হবেনা। আমাদের দেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। প্রতিবছর ৩৫ হাজার নতুন রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে. অর্থাৎ প্রতিবছর এই সংখ্যাটা বাড়ছে।

তিনি বলেন, যাদেরকে ইতিপূর্বে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হয়েছে, তাদেরকে কিভাবে ফেরত পাঠানো যায় আমরা সেই নিয়েই কাজ করছি। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ সমস্ত রাষ্ট্রসমূহের সহায়তা কামনা করেছি, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে মায়ানমারের সরকারের উপর যাতে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। সেজন্য ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি শিরিষ তলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বই মেলায় “মহান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক” প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন তারা আবারো অভিযান চালাবে, অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে, সরকার এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিবে সাংবাদিকদেও এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন কদিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিউনিখে সিকিউরিটি কনফারেন্সে গিয়েছিলেন, সেখানেও আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে আলোচনা করেছি। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের যেই প্রতিনিধি দল আসছে, এটি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরো গভীরতর করার ক্ষেত্রে সহায়ক। সেখানে নিশ্চিতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা আলোচনা করব।

তিনি বলেন, রাখাইনে অভিযান পরিচালনা করাটা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু সেটির কারণে আমাদের এখানে উত্তেজনা ইতিপূর্বে তৈরী হয়েছে, এবং সেখানকার মর্টারশেল আমাদের দেশে এসে পড়েছে, দুইজন নিহতও হয়েছে। ৩৩০জনের মতো তাদের সেনা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য আমাদের দেশে এসেছিল, আবার তাদেরকে ফেরত নিয়ে গেছে। মায়ানমারের রাষ্ট্রদুতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ডেকে সেটির প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি। সুতরাং আমরা আশা করব ইতিপূর্বে যেধরণের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল সেই ধরণের পরিস্থিতি আবার উদ্ভব হবেনা।

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খাঁন বলেছেন গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন অবশ্যই হবে এবিষয়ে সাংবাদিকদেও প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিবর্তন করতে হলে বিএনপিকে আগামী ২৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তখন জনগণ যাদেরকে ভোট দিবে তারাই সরকার গঠন করবে। এতদিন ধরে বিএনপি যেই আন্দোলন করেছে এগুলো সব পরীক্ষায় তারা ফেল করেছে। এখন তারা আবার পরীক্ষা-নিরিক্ষা করুক, আরো বেশি করে পড়াশোনা করুক, তারপর আমরা দেখব তারা কি করে। অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করার ক্ষেত্রে সরকার কাউকে বাঁধা দিবে না। কিন্তু বিএনপি ইতিপূর্বে আন্দোলনের নামে যেই সহিংসতা নৈরাজ্য করেছে, সেগুলো আর করতে দেয়া হবেনা।

বই মেলার একুশে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করার পর ছাত্রলীগ প্রথম যেই দশ দফা দেয়, সেই দশ দফার মধ্যে অন্যতম দফা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। এবং সেই দশ দফার ভিত্তিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে তরুণ নেতা শেখ মুজিবসহ ছাত্র নেতারা জেলায় জেলায় সফর করেছিল। এই ইতিহাসগুলো অনুম্মোচিত রয়ে গেছিল, আজকে সেগুলো ধীরে ধীরে উম্মোচিত হচ্ছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতেছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালি জাতীর মুক্তি নিহিত নাই।

চট্টগ্রাম বইমেলাকে আন্তর্জাতিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, আগরতলা, আসামসহ তাদের গুণিজন এবং প্রকাশকদের ডেকে আনতে হবে, তখন এই মেলার আন্তর্জাতিকীকরণ হবে। ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষায় যখন কোন বই প্রকাশিত হয়, সেটি একইসাথে নিউইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডেও হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি হয়না। কলকাতায় একটি বই প্রকাশিত হলে সেটি একইসাথে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে একসাথে হয়না।
তিনি বলেন, আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই সংস্কৃতি লালন করি, একই পাখির কলতানে আমরা বড় হই, একই নদীর অববাহিকায় আমরা বসবাস করি, কিন্তু ১৯৪৮ সালে আমাদের মধ্যে যেই রাজনৈতিক সীমারেখা টানা হয়েছিল সেটি অতিক্রম করে আমাদের হৃদয়ের বন্ধন ছিন্ন না হলেও আমাদের মাঝে মানুষে মানুষে নৈকট্য বাড়ানো প্রয়োজন। সেটি বাড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নাট্যকলায় সম্মাননা পাওয়া শিশির দত্ত, কবিতায় সম্মাননা পাওয়া আবসার হাবীব প্রমুখ।

এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন; মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শিল্প উন্নয়ন ও সমাজসেবায় মো. নাছির উদ্দিন (মরণোত্তর), চিকিৎসায় প্রফেসর ডা. মো. গোফরানুল হক, নাট্যকলায় শিশির দত্ত, সংস্কৃতিতে শ্রেয়সী রায়, শিক্ষায় প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ, সাংবাদিকতায় জসীম চৌধুরী সবুজ, ক্রীড়ায় জাকির হোসেন লুলু, স্বল্পদের্ঘ্য চলচিত্র নির্মাণ ও গবেষণায় শৈবাল চৌধুরী, লোকসাহিত্য ও গবেষণায় শামসুল আরেফীন, প্রবন্ধে শামসুদ্দিন শিশির, কবিতায় আবসার হাবীব ও ভাগ্যধন বড়ুয়া, শিশু সাহিত্যে ছড়াকার অরুণ শীল ও শিবু কান্তি দাশ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.