হাজারী গলির ঘটনায় পুরো চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার, আটক ৮০
চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে ইসকন নিয়ে ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ এবং পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হাজারী গলিতে দুর্বৃত্তের ছোঁড়া ইটপাটকেল ও এসিড নিক্ষেপে ৫ সেনা সদস্য এবং ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর পুরো চট্টগ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়ানো হয়েছে যৌথবাহিনীর টহল ও তৎপরতা। অপরদিকে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।
আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে যৌথবাহিনী। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন যৌথবাহিনীর পক্ষে টাস্কফোর্স–৪‘র মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ।
তিনি বলেন, গত ৫ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় ওসমান আলী নামে এক ব্যক্তির ইসকন বিরোধী এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫শ থেকে ৬শ দুষ্কৃতকারী ওসমান ও তার ভাইকে হত্যা এবং জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যের ৬টি গাড়ি সেখানে পৌঁছে। বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা হবে জানালেও বিশৃঙ্খলাকারীরা আরও আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে।
তিনি আরও জানান, দুর্বৃত্তরা এসময় যৌথবাহিনীর ওপর জুয়েলারি কাজে ব্যবহৃত এসিড নিক্ষেপ ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ এবং পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়। বর্তমানে ৫ সেনা সদস্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। দুর্বৃত্তরা ইট ছুঁড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশীল্ড ভেঙ্গে ফেলে।
সংবাদ সম্মেলনে টাস্কফোর্সের মুখপাত্র বলেন, উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত শনাক্তে হাজারি লেনে যৌথবাহিনীর ১০ টি টহল দল ৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় গেলে পুনরায় দুষ্কৃতিকারীরা এসিড সদৃশবস্তু নিক্ষেপ করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন ৮০ জনকে আটক করা হয়। বর্তমানে সিসিটিভি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারী চিহ্নিত করা হচ্ছে। বর্তমানে দুর্বৃত্তদের আটক করতে অভিযান চলমান এবং হাজারী লেনসহ নগরীর অন্যান্য এলাকা নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদবলেন, ‘আইন তার নিজস্ব ধারায় চলবে। মাঠপর্যায়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য যাচাই বাছাই করছি। সে অনুযায়ী আমরা আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করবো। সরকার পতনের পর যেসকল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে, সেসব সমাবেশে যেন শান্তি বিঘ্নিত না হয় আমরা সেজন্য সরকারের গাডলাইন অনুযায়ী কাজ করেছি।’
হাজারি গলির দোকান সিলগালার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওই এলাকায় সেনা ও পুলিশ সদস্যের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দোকানগুলো সিলগালা করা হয়েছে৷ আমরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়াচ্ছি। অতিসত্তর তদন্তকার্যক্রম শেষ করে দোকানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।’ আটক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের কোনো পলিটিক্যাল পরিচয় আসলে আসে না। তাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) একজন করে প্রতিনিধি।
গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনকে নিয়ে ফেসবুক পোস্ট কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে রাতভর সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এসময় দুবৃত্তদের ছোড়া এসিডে ৭ পুলিশ সদস্য ঝলসে গেছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। বলা হচ্ছে, সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। ফটোকার্ড সম্বলিত সেই পোস্ট ফের ফেসবুকে শেয়ার করেন হাজারী গলির মিয়া শপিং সেন্টারের এক দোকান মালিক। সেই পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় সনাতনীদের একাংশ গতকাল বিকেলে দোকানটি ভাঙচুর এবং দোকান মালিকের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ছুটে যান পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। একপর্যায়ে আইনশৃংলাবাহিনীর ওপর ইট–পাথর নিক্ষেপ ও অ্যাসিড ছুড়ে মারে বিক্ষোভকারীরা। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে করে বিক্ষোভকারীরা। রাতভর চলা সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.