চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ‘র পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

চট্টগ্রাম ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ। এ সময় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘নিজ উদ্যোগে পদত্যাগ না করলে হেনস্তার শিকার হবে’ বলেও  হুঁশিয়ারি দেন তারা।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি কার্যালয়ে এ বিক্ষোভ করে তারা। একই সঙ্গে পদত্যাগের পাশাপাশি ১৭ দফা দাবিও উত্থাপন করেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা সরকারের খুব আপনজনদের একজন আপনি। সুতরাং আমরা চাই স্বৈরশাসকের অনুসারিরা এ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকবে না। তাই অতিত্ত্বর চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি থেকে পদত্যাগ করুন। স্বৈরশাসকের কোনো দোসরকে এ পদে রাখবো না।’ এখন আপনি কি করবেন বলে বিক্ষোভকারীরা সরাসরি এমডিকে জিজ্ঞেস করলে এর উত্তরে এমডি প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বিক্ষোভকারীদের বলেন, আমি কোনো স্বৈরশাসকের দোসর না। তাদের কারো সঙ্গে আমার যোগাযোগও ছিল না।

ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আমি সরকার নিযুক্ত লোক; কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না। আজকে মানুষদের কথায় চলে গেলাম। তখন সরকার আমার থেকে জানতে চাইবে আমি গেলাম কেন! চট্টগ্রাম ওয়াসায় আমার কোন দুর্নীতি নেই। এখানে দুদক ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে তদন্ত করেছে। কোন দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।

এমডি ফজলুল্লাহ’র আয়কর বিবরণী ২০০৯-২০২৪ এবং সম্পদ বিবরণী জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে, ফজলুল্লাহ’র ভ্রমণ বিল (২০০৯-২০২৪) এর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে হবে,  অবিলম্বে স্বৈরচারী সরকারের পোষ্যদের নিয়ে গঠিত বোর্ড বাতিল করতে হবে,  চট্টগ্রাম ওয়াসার মূল দুর্নীতির কারখানা প্রকৌশল ও রাজস্ব শাখাকে ঢেলে সাজাতে হবে। দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে,  ৪ আগষ্ট স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পক্ষ নিয়ে তাণ্ডবে অংশ নেয়া ওয়াসার কর্মচারীদের চিহ্নিত করে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে সহ ১৭ দফা দাবি পেশ করে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোক্তাদের জাতীয় সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এবং চট্টগ্রাম নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে অবসর নেন। চাকরি জীবনে অনিয়মে জড়িয়ে হয়েছিলেন বহিষ্কার। পরবর্তীতে একটি কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হয়ে জড়ান অর্থ আত্মসাতে। দুই দফায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে খাটিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ তৈরি হলে প্রথম দফায় তিন মাসের জন্য এমডির দায়িত্ব পান তিনি। পরে পাঁচ দফায় পুনর্নিয়োগে গত ১৩ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করেছেন এ কে এম ফজলুল্লাহ। সর্বশেষ ২০২০ সালের অক্টোবরে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার পর হাসান আলী নামে এক গ্রাহক পুনঃনিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেছিলেন। ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে একবার ও এমডি হিসেবে ৬ষ্ঠ বারের মত দায়িত্ব পান তিনি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.