চট্টগ্রামে নৌকার নতুন পাঁচ কাণ্ডারী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে।

রবিবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে দলীয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অথবা ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে যুক্ত হয়েছেন নৌকার নতুন পাঁচ কাণ্ডারী। এর মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় সড়ে দাড়ালেও বাদ পড়েছেন বাকী ৫ পুরনো সাংসদ। এতে দলের নিজস্ব জরিপের ভিত্তিতে সারা দেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৩ আসনে (চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের ১৬ আসন, কক্সবাজারের ৪ আসন এবং তিন পার্বত্য জেলার ৩ আসন) আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করে মনোনয়ন বোর্ড।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম– ১ মীরসরাইয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ইঞ্জি: মোশাররফ হোসেন এর পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসনে মনোয়ন পান সাবেক রফিকুল আনোয়ারের কন্যা, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ আসনে বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড আসনে বর্তমান সাংসদ দিদারুল আলমের পরিবর্তে মনোয়ন পান সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান (সদ্য পদত্যাগ করা) এস এম আল মামুন, চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী আসনে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম। চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম–৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–ডবলমুরিং) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম–১২ (পটিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী পরিবর্তে মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন।

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকেট পেতে বর্তমান এমপিসহ মোট ২১৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৩২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দেন। অনেকে ৩ আসনে, অনেকে ২ আসনে ফরম জমা দেন।

একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েকটি বাদে প্রায় আসনে পুরনোদের ওপরই আস্থা রেখেছেন দলের হাই কমান্ড। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে সীতাকুণ্ডে আসনে এসএম আল মামুন। মীরসরাই আসনে পিতার পরিবতে ছেলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবুর রহমান রুহেল নবীন হিসাবে চমক দেখিয়েছেন মনোনয়ন পেয়ে। কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে মীরসরাই আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রুহেল।

এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসন দুটি জাতীয় পার্টি ও তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই দুটি আসন থেকে জাতীয় পার্টি ও তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার আসন দুটি ছেড়ে দেওয়া হবে কিনা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এতদিন শোনা গিয়েছিল, হাটহাজারী আসনটি এবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিমকে এবং চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসনটি নির্বাচন কমিশন থেকে সদ্য নিবন্ধনপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। হাটহাজারী আসনের জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরীকে অন্য একটি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত শরিকদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলে জানা যাবে চট্টগ্রামের কোন আসনটি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম : কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে কক্সবাজার–১ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ। কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ সাইমমু সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-৪ শাহীন আকতার।

বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, রাঙামাটি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এবং খাগড়াছড়ি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা আবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

এদিকে আজ সকালে গণভবনে ডাক পেয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।