বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। উদ্বোধন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।
আজ (শনিবার) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে গর্বের এই স্থাপনার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর টানেল দিয়ে কর্ণফুলী উপজেলার কেইপিজেড মাঠে গিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান মন্ত্রীর গাড়ি বহর টানেল পার হন এবং প্রথম টোল পরিশোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক বলয়ের আরেক স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন করলেন। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মহেশখালী, টেকনাফ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এক অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তুলছে।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
আরো যেসব প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়াও চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ টাওয়ার, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শিকলবাহা খালের ওপর পিসি গার্ডার ব্রিজ, ডিসি পার্ক, হাজার বছরের নৌকা জাদুঘর, ১৯১টি ইউনিয়নে খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস ও পর্যটক বাস, রিভার ক্রুজ ও ফুল ডে ট্যুর সম্বলিত পর্যটন সেবা, বার্ডস পার্ক ও চিড়িয়াখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী এই সফরে তিনটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেগুলো হলো-চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ, বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক এবং সিমেন্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, এসব প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগেরই কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.