আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ বিল পাস সংসদে
জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ‘চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ বিল’। সামরিক আমলে করা আইন বাতিল করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় অবস্থিত চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম সরকারের পক্ষে পরিচালনা করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মসজিদের নামে একটি তহবিল থাকবে। তাতে সরকার, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার দেওয়া অনুদান, দান বা মসজিদের সম্পত্তি থেকে পাওয়া আয় জমা থাকবে।’
বিলে আরও বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি মসজিদের সম্পত্তি বেআইনিভাবে দখল করলে বা দখল করার উদ্যোগ নিলে বা তার দখল, জিম্মা বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোনও সম্পত্তি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে যথাযথভাবে হস্তান্তর না করলে, তা হবে অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।’
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রামে অবস্থিত মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ।
আন্দরকিল্লার সাথে মোঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনী সম্পর্কিত। এই কিল্লা বা কেল্লায় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁ’র ছেলে উমেদ খাঁ এই আন্দরকিল্লার অন্দরে বা ভিতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় ‘আন্দরকিল্লা’। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এখানে নির্মাণ করেন ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ।’
১৬৬৭ সালে এই মসজিদ নির্মাণের পর থেকেই চট্টগ্রামের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হয়ে উঠে আন্দরকিল্লার এই মসজিদ। এই মসজিদের ইমাম/খতিব নিযুক্ত হতেন পবিত্র মদিনার আওলাদে রাসুলগণ। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই এই মসজিদ জনপ্রিয় হয়ে পড়ে।
স্থাপত্য ও গঠন মোঘল রীতি অনুযায়ী তৈরি এই মসজিদ সমতল ভুমি থেকে প্রায় ত্রিশ ফুট উপরে ছোট্ট পাহাড়ের ওপর নির্মিত। মূল মসজিদের নকশা অনুযায়ী এটি ১৮ গজ (১৬ মিটার) দীর্ঘ, ৭.৫ গজ (৬.৯ মিটার) প্রস্থ এবং প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২.৫ গজ (২.২ মিটার) পুরু। পশ্চিমের দেয়াল পোড়া মাটির তৈরি এবং বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের তৈরি। মধ্যস্থলে একটি বড় গম্বুজ এবং দুটি ছোট গম্বুজ দ্বারা ছাদ আবৃত।
১৬৬৬ সালে নির্মিত এর চারটি অষ্টভূজাকৃতির বুরুজগুলির মধ্যে এর পেছনদিকের দুটি এখন বিদ্যমান। মসজিদটির পূর্বে তিনটি ও উত্তর এবং দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মেহরাব থাকলেও সাধারণত মাঝের ও সর্ববৃহৎ মেহরাবটিই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, মসজিদটি নির্মাণ কৌশলগত দিক থেকে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের প্রায় প্রতিচ্ছবি হওয়ায় এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুসলিম স্থাপত্য বিকাশের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রার জন্ম দেয়। মসজিদটি দিল্লি জামে মসজিদের আদলে বড় বড় পাথর ব্যবহার করে নির্মিত বলে এটিকে পাথরের মসজিদ বা ‘জামে সঙ্গীন’ও বলা হয়ে থাকে। শুধু স্থাপত্য নিদর্শনেই নয়, শৈল্পিক দিক থেকেও এই মসজিদ উল্লেখযোগ্য। কারণ চট্টগ্রামে মুসলিম বিজয়ের স্মারকস্বরূপ হিসেবে শিলালিপি ভিত্তিক যেসব স্থাপনা আছে, সেগুলোর মধ্যে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের গায়ের শিলালিপি অন্যতম।
মসজিদের মূল ইমারতের প্রবেশপথে কালো পাথরের গায়ে খোদাইকৃত সাদা অক্ষরে লেখা ফার্সি লিপির বঙ্গানুবাদ হলঃ “হে জ্ঞানী, তুমি জগতবাসীকে বলে দাও, আজ এ দুনিয়ায় ২য় কাবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রতিষ্ঠাকাল ১০৭৮ হিজরি (১৭৬৬ সাল)। এই শিলালিপি থেকে এর প্রতিষ্ঠাতার নামও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, এই মসজিদে পাওয়া সকল শিলালিপির সাথে সিরিয়ার ‘রাক্কা নগর’-এর স্থাপত্যকলার মিল রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.