দেশ ও মানুষের কথা ভাবতে হবে: ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

১৫৩

ব্যবসায়ীদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের দেশ ও মানুষের কথা ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) গণভবনে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।

সভায় সরকারপ্রধান তেল-চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের সব নাগরিকের কাছে যথাযথ মূল্যে সরবরাহ করতে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ব্যবসায়ীরা, সে যে দলেরই হোক না কেন, যাতে ব্যবসাটা ‘ব্যবসায়ী’ হিসেবে করতে পারে সেই পরিবেশটা আমি সৃষ্টি করে দিয়েছি।’’

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো হাওয়া ভবনও নেই, আর পিএমওতে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) কোনো উন্নয়ন উইংও নেই। হাওয়া ভবনে এক ভাগ দিতে হবে, উন্নয়ন ভবনে এক ভাগ দিতে হবে বা অমুক জায়গায় দিতে হবে- এই যন্ত্রণায় আপনাদের ভুগতে হয় না এখন। এটা তো আপনারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, সেই যন্ত্রণা থেকে সবাই মুক্ত আছেন।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘এই ১৪ বছর একটানা ধারাবাহিকভাবে আপনারা লাভজনক ব্যবসা করে গেছেন। আমরা কিন্তু করোনার সময়ও মোকাবিলা করলাম। প্রণোদনা দিলাম, বিশেষ প্রণোদনা। আমার কাছে কেউ এসে দাবি করেনি, কেউ বলেনি। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার একটা টিম খুব ভালো কাজ করছিল- যে কোথায় কী করা যেতে পারে। অর্থনীতির চাকাটা চলমান রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ, তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড বন্ধ, সবকিছু। আমরা বলেছি, এখানে বন্ধ হতে দেব না। এখানে চালু রাখতে হবে। শ্রমিকদের বেতন, এই যে গার্মেন্টস, তার বেতন তো আমি দিয়ে দিলাম সব। প্রণোদনা প্যাকেজ করলাম, বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।’

দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন একটু যখন অপজিশন মাঠে নেমে গেছে হঠাৎ, ব্যবসায়ী মহলে আবার একটু শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে অথবা কারো আশার প্রদীপ জ্বলে উঠছে; যদি আবার হাওয়া ভবন খুলতে পারে, তাহলে সুবিধা পাবে।’

তিনি বলেন, ‘১৪ বছর আমরা সরকারে, আমি জানি না ব্যবসায়ীরা এটা উপলব্ধি করেন কি, করেন না। এত নিশ্চিন্তে ব্যবসা করার সুযোগ তো আর পাননি।’

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই এনার্জি ক্রাইসিসে বাংলাদেশ একা নয়, পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু ভুগছে। ক্রাইসিসটা তো বাংলাদেশের নয়, ইন্টারন্যাশনাল। এটি মাথায় রাখতে হবে। যেসব জায়গা থেকে আমরা সার, গম, খাবার পণ্য আনি, সব জায়গায় সমস্যা।’

মেগা প্রজেক্ট এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ সমালোচনা- মেগা প্রজেক্ট, তারপর বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনা, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কেন আনলাম- তা নিয়ে সমালোচনা। সেখানে নাকি টাকা মেরেই খেয়ে দিলাম। যারা ওরকম টাকা খেয়ে অভ্যস্ত টাকা খাওয়ার বিষয়টি বুঝে ভালো। কিন্তু আমরা যদি তখন এটা না আনতাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারতাম না। আমরা বলেছিলাম বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে দেব, আমরা দিয়েছি। কিন্তু এখন যে ক্রাইসিস সেটা তো বাংলাদেশের না, এটি তো ইন্টারন্যাশনালি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবাই এই ক্রাইসিসে ভুগছে।’

ব্রাজিল থেকে সয়াবিন ও চিনি আমদানি করার চেষ্টার কথা জানান সরকারপ্রধান।

দুর্ভিক্ষ আসতে পারে এমন বক্তব্যের সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু আগাম কিছু কিছু কথা বলি- অনেকে মনে করেন আমি কেন বলি? কই থেকে বলি? এটি হলো আমার একটি ধারণা অর্থাৎ দীর্ঘদিনের একটি অভিজ্ঞতা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ হলো, সারা বিশ্বে এর অর্থনৈতিক ধাক্কাটা এলো। শুধু আমাদের ওপর না পুরো ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে ডেভেলপড কান্ট্রির ওপরে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ল। তখন আমি বললাম যে, আগামীতে একটি দুর্ভিক্ষ অবস্থা হতে পারে। এখন তো সবাই সেই কথাই বলছে। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার বক্তব্যে এ কথাই বলেছেন। বলছেন যে, বিরাট ক্রাইসিস সামনে। এটি যে শুধু আমরা বলছি, তা নয়।’

টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি যা আশঙ্কা করি, পাবলিকের কাছে তা সরাসরি বলি। আমার এখানে লুকানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিয়েছে, ক্ষমতায় আছি, না দিলে থাকবো না। কিন্তু জনগণের জন্যই তো কাজ করতে এসেছি।’

গণভবনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রমুখ।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ টিকে গ্রুপ, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এসিআই লিমিটেড ও আকিজ গ্রুপের প্রতিনিধিরা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.