আফগানিস্তানে মার্কিন মিশন সমাপ্তির ঘোষণা বাইডেনের

দু’দশকের যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা, লাখেরও বেশি আফগান নিহত

২৪৭

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাসহ সকল বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের কাজ চলছে। সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে অনেকে দ্বিমতও পোষণ করছেন। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পক্ষেই ফের কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে আগামী আগস্টের মধ্যেই সকল সেনা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবে। বাইডেনের কথায়, ‘আফগানিস্তানে আমাদের সামরিক অভিযান ৩১ আগস্ট শেষ হবে।’

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) স্থানীয় সময় হোয়াইট হাউসে জো বাইডেন একথা বলেন। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

বাইডেন বলেন, আফগানিস্তানের দায়িত্ব নিতে হবে আফগান নেতাদেরই। যুক্তরাষ্ট্র আর সাহায্য করতে পারবে না। তার মতে, আফগানিস্তানের সকল নেতাকে একসঙ্গে আলোচনা করে দেশের নতুন রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

বাইডেনের বক্তব্য, তিনি তালেবানকে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু কাবুলের সরকার এবং প্রশাসনকেই তার মোকাবিলা করতে হবে। মার্কিন সাহায্যে তৈরি কাবুলের সরকারের হাতে এখন সে ক্ষমতা আছে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া মার্কিন সেনা চলে গেলে তালেবান আফগানিস্তান দখল করবে, এমনটা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন না বাইডেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এক লাখ কোটি ডলার ব্যয় করার পর এবং ২৪০০-র বেশি মার্কিন সেনার মৃত্যুর পর দুই দশক আগে প্রণীত নীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্ত থাকতে পারে না।

বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বর্তমানে মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাইডেন আরও জানিয়েছেন, তিনি চান না আর একটিও মার্কিন প্রাণ আফগানিস্তানে নষ্ট হোক। বহু মার্কিন পুরুষ এবং নারীর প্রাণ গিয়েছে আফগানিস্তানের যুদ্ধে। আর প্রাণ তিনি যেতে দেবেন না।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে অধিকাংশ সেনা দেশে ফিরে এসেছে। বাকিরাও দ্রুত ফিরে আসবে।

অন্যদিকে বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের মধ্যেই ইরান-আফগান সীমান্ত দখল করেছে তালেবান। আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের বর্ডার এখন তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের ভেতর পঞ্চাশেরও বেশি অঞ্চল তারা দখল করেছে। ঘিরে ফেলেছে আঞ্চলিক রাজধানীগুলো।

রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদের কথা হয়েছে। তালেবান আশ্বস্ত করেছে, দেশের ভেতর বিদেশি দূতাবাসগুলো যাতে সুরক্ষিত থাকে, তারা তা দেখবে। আফগান রীতি এবং ইসলামিক নীতি মেনে তারা মানবাধিকার রক্ষা করবে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।

অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.