রাতে বেরোনোই কাল হলো মুসলিম পরিবারটির
কানাডায় ‘পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে’ ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে চালানো হামলায় নিহত মুসলিম পরিবারটির সদস্যরা পাকিস্তান থেকে উত্তর আমেরিকার ওই দেশটিতে গিয়েছিলেন। ১৪ বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছিলেন। এছাড়া প্রতিদিন রাতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বের হতেন হাঁটতে। রোববারও বের হয়েছিলেন। আর এটাই কাল হলো তাদের জন্য।
এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে একটি শপিং সেন্টার থেকে তাকে আটক করা হয়। স্থানীয় সময় রোববার দেশটির অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত যুবকের নাম নাথানিয়েল ভেল্টম্যান। তার বয়স ২০ বছর। স্থানীয় লন্ডন শহরের বাসিন্দা তিনি।
এদিকে, ট্রাক চালিয়ে দিয়ে ওই মুসলিম পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনার কারণ হিসেবে ‘বিদ্বেষ’কে দায়ী করেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ভেল্টম্যানের বিরুদ্ধে সরাসরি চারজনকে হত্যা এবং একজনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, রোববার রাতে মুসলিম পরিবারটির সদস্যরা প্রতিদিনের মতো হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। বাবা, মা, মেয়ে, ছেলে এবং নানি। এমন সময় একটি ট্রাক এসে তাদের সজোরে ধাক্কা মারে। পুলিশ জানিয়েছে, যে ব্যক্তি ট্রাক চালাচ্ছিলেন, তিনি ইচ্ছে করে এবং হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেয়।
গাড়ি চাপায় নিহতদের মধ্যে আছেন ৭৪ বছর বয়সী এক নারী, ৪৬ বছর বয়সী এক পুরুষ, ৪৪ বছর বয়সী এক নারী ও ১৫ বছর বয়সী তরুণী। নয় বছরের একটি শিশু এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। পরিবারের অনুরোধে মৃতদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
মুসলিম ওই পরিবারটি ১৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে কানাডায় যায়। স্থানীয় মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাদের। এছাড়া প্রতিদিনই তারা রাতে হাঁটতে বের হতেন। রোববারও বাড়ির বাইরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তারা। তবে আর ফেরা হয়নি। ঘাতকের পূর্বপরিকল্পিত হামলায় নিহত হন তারা।
পুলিশ প্রধান স্টিভ উইলিয়ামস জানিয়েছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, ২০ বছর বয়সী গাড়িচালক ইচ্ছে করেই এই কাজ করেছেন। আমাদের বিশ্বাস, এই পরিবারকে টার্গেট করেছিল, কারণ তারা মুসলিম। এটা বিদ্বেষমূলক অপরাধ।’
ডিটেকটিভ সুপার পল ওয়েইট জানিয়েছেন, পুলিশ এখন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনবে কি না, তা খতিয়ে দেখছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা গ্লোবাল নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেছেন, ট্রাকটি রাস্তার বিপরীত দিকে এসে হাঁটার জন্য নির্ধারিত জায়গায় উঠে যায় এবং তাদের সজোরে চাপা দেয়।
এরপরই কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো টুইট করে বলেন, ‘আমি লন্ডন এবং দেশের সব মুসলিমকে জানাচ্ছি, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমাদের দেশে ইসলামোফোবিয়ার (ইসলাম বিদ্বেষ) কোনো স্থান নেই। এই ধরনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
লন্ডন শহরের মেয়র জানিয়েছেন, মুসলিম-বিদ্বেষের কারণেই ওই মুসলিম পরিবারটির চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। শহরের চার লাখ বাসিন্দার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এই ঘটনায় শোক জানিয়ে শহরে তিনদিনের জন্য পতাকা নামিয়ে রাখা হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.