উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে করোনা: মার্কিন রিপোর্ট
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। কিন্তু কোথা থেকে এলো এই মারাত্মক ছোঁয়াচে জীবাণু; আর কিসের মাধ্যমেই বা এর উৎপত্তি, এ নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। চলছে তদন্তও। তবে সবার সন্দেহের আঙুলও যেন চীনের দিকেই। মার্কিন সরকারের রিপোর্টেও উঠে এসেছে একই তথ্য। বলা হয়েছে, চীনের উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে।
প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ সোমবার (৭ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য সামনে এসেছে। মার্কিন সরকারের এই নথির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
মার্কিন সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে এবং সঙ্গত কারণেই এ বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
সোমবারের প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ২০২০ সালের মে মাসে করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে গবেষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি। মূলত কোভিড-১৯ এর জিনোমিক অ্যানালাইসিসের ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট দেয় তারা।
এর আগে করোনার উৎস অনুসন্ধানে কাজ করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টি নিয়ে তার কাছে ৯০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতেও আদেশ দেন তিনি। যদিও এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) উহানে গিয়ে একবার তদন্ত করে এসে প্রতিবেদন দিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দারা অবশ্য বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, দুর্ঘটনাবশত চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (ডব্লিউআইভি) থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাদুড়ের শরীর থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে থাকতে পারে।
সম্প্রতি আরেকটি প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, চীন করোনা মহামারির তথ্য প্রকাশ করার আগেই ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশটির উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লিউআইভি) তিন গবেষক হাসপাতলে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রকাশিত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যও উল্লেখ করে পত্রিকাটি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, উহান শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার ওই মার্কেটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি যখন মারা যান, তখনও এই রোগের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। চীনের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
করোনায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, চীন থেকে গোটা বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে কোভিড-১৯ কে ‘‘চীনা ভাইরাস’’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
যদিও, চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, করোনাভাইরাসের উত্স নির্দিষ্ট কোনো একটা জায়গা নয়। একাধিক উত্স থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.