ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া মোকাবিলায় ১০০ দিনের বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু : কানাডা সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন বলেছেন, একটি শহরকে সুন্দর করার জন্য সিটি গভারমেন্টের কোন বিকল্প নেই। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মেয়র সব সংস্থার প্রধান না হওয়ায় শহরের কাজগুলো ঠিক সময়ে করাযাচ্ছে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে শহরে প্রতিদিন উৎপাদিত ৩হাজার টন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে শহরে আর ময়লা থাকবে না, এসব ময়লা এখন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
মেয়র বলেন, শহরের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জনসচেতনতা বাড়াতে আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা ১০০ দিনের বিশেষ মশক নিধনের লক্ষ্যে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি, যা আগামী তিন মাস চলবে।
মেয়র উল্লেখ কেরেন, চিকুনগুনিয়ার প্রভাব এই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি। এজন্য আমরা প্রতিটি হটস্পট এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। প্রয়োজনে আমি নিজে প্রতিটি জোনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব।
সম্প্রতি কানাডা সফর শেষে নগরীর সার্বিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রোববার দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এসব কথা বলেন।
কানাডা সফর প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কানাডা সফরে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। টরন্টো ও মন্ট্রিয়লে বিভিন্ন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম, আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, পরিবেশবান্ধব নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মধ্যে যৌথ সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থী বিনিময়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

এছাড়া, টরেন্টোর অন্টারিও প্রদেশের এমপিপি মেরি-মার্গারেট ম্যাকমাহনের সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু সহনশীলতা, স্টার্টআপ উন্নয়ন এবং নার্সিং খাতে দক্ষ জনশক্তি গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। টরন্টো সিটি হলে মেয়র অলিভিয়া চৌ ও এমপিপি ডলি বেগমের সঙ্গে যৌথ বৈঠকে নগর উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যখাতে প্রশিক্ষিত জনবল বিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের জন্য আন্তর্জাতিক সিটি-টু-সিটি সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টরন্টো সিটির সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি (সিস্টার সিটি) স্বাক্ষরের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এটি বাস্তবায়িত হলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কানাডা সফরের সময় লেদার পণ্য রপ্তানি, নার্সিং ও হেলথকেয়ার সেবা, গ্রীন এনার্জি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কানাডার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেন চসিক মেয়র।
চট্টগ্রাম শহরে নালায় পড়ে শিশু মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হালিশহরের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিবন্ধী, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষ সতর্কতা ও সচেতনতার প্রয়োজন। আমরা পরিবার ও কেয়ারটেকারদের দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি এবং সিটি কর্পোরেশন থেকেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। শিশুদের নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি শিশু কখনোই স্বাধীন নয়, সে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। গার্মেন্টস হোক বা অন্য কোনো কর্মস্থলে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে গেলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্মীরই। সিটি কর্পোরেশন কিংবা অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে সব শিশুদের তদারকি করা সম্ভব নয়। এ দায়িত্ব প্রথমেই পরিবারের বা অভিভাবকের। আর সব নালা ঢেকে দেওয়াও সম্ভব নয়। কিছু নালা সার্ভিস লাইন হিসেবে খোলা রাখতে হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব শুধু সিটি কর্পোরেশনের নয়, নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা ডোর-টু-ডোর ময়লা সংগ্রহ প্রকল্প চালু করেছি। প্রতি পরিবার মাসে ৬০ টাকা করে বর্জ্য সংগ্রকারীকে প্রদান করতে হবে। কানাডার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সেখানে ধনী গরিব সবাই নিজ হাতে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে। আমাদেরও এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ৬০ টাকা খরচ করেও যদি শহরকে সুন্দর রাখতে না পারি, সেটা দুঃখজনক। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। ডোর-টু-ডোর সেবার ক্ষেত্রে ৬০ টাকার বেশি দাবি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জাপান, কোরিয়া, কানাডা, চীন ও নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগকারীদের সাথে ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন যে বিপুল বর্জ্য উতপাদন হয় তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শহরের পরিবেশ ও অর্থনীতি উন্নত করা সম্ভব হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ড্রেনেজ সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফরহাদুল আলম, ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান জিয়া উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.