চামড়ার মূল্য নেই এবারও

২২৬

চট্টগ্রামে এবারও চামড়া মূল্য নেই, নেই ক্রেতাও। একারণে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে চামড়া। চট্টগ্রামে চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ৪০০ টাকা।

সকালের দিকে চামড়া সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকায় বিক্রি হলেও দুপুরে দাম পড়ে যায়। শহরে কিছু বিক্রি হলেও গ্রামে নেই চামড়ার ক্রেতাও। গ্রামের অনেক এলাকায় চামড়া কিনতেও আসেনি বলে জানা গেছে। সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের ছৈয়দর রহমান জানান, দুপুর পর্যন্ত চামড়া কেনার কোন ক্রেতা তারা পাননি। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে পরে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় খবর দেয়া হলে তারা নিয়ে যান চামড়া। এমন অবস্থা তার আশপাশের সবার বলে জানান ছৈয়দর রহমান।

নগরীর বহদ্দারহাট, চেমুহনী, টাইগারপাস মোড়, নিউ মার্কেটসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এখানে চামড়া বিক্রির জন্য স্তুপ করছেন। এখান থেকে আড়তদাররা কিনে ভ্যানে, পিকআপ এবং ট্রাকে করে চামড়াগুলো নিচ্ছেন তাদের আতুরার ডিপো এলাকায় আড়তে।

চৌমুহনী এলাকায় হালিশহর থেকে আসা নূরুল আলম বলেন, “দুই ঘণ্টা হয়েছে এসেছি । এখনো একটি চামড়াও বিক্রি করতে পারিনি। আমরা বড় যে চামড়াগুলো সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় কিনেছি সেগুলো এখানে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা চাচ্ছে। গতবারের মতো এবারও চামড়ার ক্রেতা নেই। ছাগলের চামড়ার কেউ দামও জিজ্ঞেস করছে না। যারা আগে থেকে আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছেন তাদের চামড়াই গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে তারা। এতে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।”

এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য বেঁধে দিয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ঠিক করা হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা; ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ৩৩-৩৮ টাকা। এগুলো লবণযুক্ত চামড়া কিন্তু কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন আড়তদার এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

তবে আড়তদারদের প্রস্তাবিত দামেই চামড়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেক বিক্রেতা কারণ একেতো লবণ ছাড়া চামড়া গরমে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না। তার ওপর রয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী, ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের তৎপরতা। তাই মোটামুটি দামেই চামড়া ছেড়ে দিচ্ছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, আমরা প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়া লবণ ছাড়া ১৭ টাকা থেকে ২২ টাকায় নিচ্ছি। প্রতিটি চামড়া গুণগতমান ও আকৃতিভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় ক্রয় করছি। শহরে চামড়া মোটামুটি আমাদের চাহিদামতো আসছে। আমি আমার আড়তের জন্য এ বছর ৪ হাজার কাঁচা চামড়া নেব। আমি এখন (বিকাল ৫টায়) তিন হাজার নিয়েছি। সন্ধ্যার মধ্যে আর ১ হাজার চলে আসবে।”
আড়তদার সমিতির সভাপতি জানান, একটি কাঁচা চামড়া কেনার পর লবণযুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে লবণের দাম, শ্রমিক খরচ, পরিবহন ভাড়া ও বিদুৎ বিলসহ কমপক্ষে ২০০ টাকা খরচ পড়ে। কাঁচা চামড়া কেনার ক্ষেত্রে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য থেকে সেই অনুপাতে কম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।

এ বছর সারাদেশ থেকে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা ৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন যা থেকে ১৬ কোটি বর্গফুট চামড়া মিলবে যা গত বছর থেকে ১ কোটি বর্গফুট বেশি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.