বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী

২০৮

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী বছরের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হচ্ছে। যদিও এ বছরের অক্টোবরে তা উদ্বোধন করার কথা ছিলো কিন্তু বৈশ্বিক সংকট ও করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এবং চলতি বছরের ২৬ নভেম্বরের পর সম্পূর্ণ হওয়া দ্বিতীয় টিউবেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই স্বপ্নের টানেল নিজ চোখে দেখতে আসতে চান প্রধানমন্ত্রী নিজে।

সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে দেশের ২৫ জেলায় ১০০টি সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আগ্রহের কথা জানান।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে থাকা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার অনুমতি নিয়ে আমি একটি কথা বলতে চাই। ১৬ ডিসেম্বরের আগেই মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর ২৬ নভেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউবের কাজও সম্পূর্ণ হবে। আমরা টিউবের উদ্বোধনটা আপনাকে দিয়ে করাতে চাই। যেটি আপনি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করি।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি করব তো। আমি সেখানে যাব না? দেখে আসব না?’

তখন সেতু মন্ত্রী বলেন, ‘টানেল উদ্বোধন করা হবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। আপনি অবশ্যই যাবেন। তবে টিউবটা আপনি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে দিবেন।’

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে আসলে হয়তো প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরির্দশন করতে যেতে পারেন।

টানেলের দুটি টিউবের নির্মাণকাজ শেষে এখন শেষ পর্যায়ে ভায়াডাক্ট, অ্যাপ্রোচ সড়ক, টানেলের অভ্যন্তরে সড়ক নির্মাণ, পিচ ঢালাই, ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোজন, তিনটি ক্রসিং প্যাসেজ সংযোজনের কাজ। এছাড়া শতভাগ ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কাজ চলছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম টানেল টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ ২০২০ সালের ২ আগস্ট শেষ হয়েছে। এর পর ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর ২ হাজার ৪৫৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

টানেলে গাড়ি চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর নগরে প্রবেশ করতে হবে না। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। ফলে চট্টগ্রাম নগরেও যানবাহনের চাপ কমে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে চীনের সাংহাই সিটির মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকায় গড়ে উঠবে আরও একটি নতুন শহর। নতুন এই শহরের অবকাঠামো একের পর এক নির্মিত হচ্ছে। টানেলকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক ও টানেলের ভেতরের সড়ক হবে সর্বমোট ৪ লেনের। এর মধ্যে ওয়ান ওয়ে একটি টানেলে সড়ক থাকবে দুই লেনের।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল

একটি টিউবের সড়ক দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা অভিমুখী এবং অপর টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা অভিমুখী যানবাহন চলাচল করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রতিটি টিউব চওড়া ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অপর টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের প্রস্ত ৭০০ মিটার। এবং দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৪০০ মিটার।

২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে নির্বাচনী সমাবেশে এই টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছরই আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের) সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারই ঠিকাদার সিসিসিসিকে এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জুন সেতু কর্তৃপক্ষ ও সিসিসিসির মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.