জামালখানে নিখোঁজ শিশু মারজানার বস্তাবন্দী লাশ

৩০০

নগরের জামালখানে নিখোঁজের দুইদিন পর নালা থেকে মারজানা হক বর্ষা নামে সাত বছর বয়সী এক শিশুর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে জামালখান শিকদার হোটেলের পিছনের নালা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, চিপস কিনব বলে তিন দিন আগে (২৪ অক্টোবর) বিকেলে ২০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছিল মারজানা হক। এর পর শিশু মারজানা আর বাসায় ফেরেনি। নিখোঁজের পর তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পাওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। থানায় ডায়েরির পাশাপাশি এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্দেহ থেকে তারা জামালখানের সবগুলো নালা-নর্দমায় খুঁজতে গিয়ে বিকেলে বস্তাবন্দী লাশ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

পুলিশ ও পরিবারের সদসদ্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামালখান ব্রিজ গলির ভেতরের শাওন ভবনের নিচতলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকত মারজানা। গত সোমবার বিকেলে সে দোকানে যাবার কথা বলে বের হয়। দীর্ঘক্ষণ না ফিরলে বোনেরা খোঁজ নিতে শুরু করেন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। এক পর্যায়ে কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার। সিত্রাংয়ের প্রভাবে হওয়া ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছোট বোনের খোঁজে পুরো এলাকায় মাইকিং করেন বোনেরা। কিন্তু কোথাও বোনকে পাননি তাঁরা।

বিকেলে ব্রিজ গলির পাশের নালার পরিত্যাক্ত জায়গায় এক যুবক বস্তাবন্দী মরদেহটি দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বোনের লাশ পাওয়া গেছে এমন খবরে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন বড় বোন সালেহা আক্তার। বোনের বস্তাবন্দী লাশটার দিকে তাকিয়েই বিলাপ করতে থাকেন এই তরুণী। প্রায় বুজে আসা গলায় বলতে থাকেন, ‘খুনী আমার ছোট্ট বোনের জানটা কেমনে নিল?
হাতটা কি একটুও কাঁপল না। ও সাত বছরের একটা বাচ্চা মাত্র। আমরা খুনির ফাঁসি চাই। কেউ যেন খুনিকে বাঁচিয়ে না রাখে।’

লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে শত মানুষ ভিড় করেন। সেটি দেখে বোন হারানোর ব্যথায় কাতর সালেহা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। বলেন, বোনের খোঁজে সবখানে ধর্না দিয়েছি। যেখানে যেখানে সিসি ক্যামরা আছে সেখানেই গেছি। কিন্তু কেউ আমাদের ফুটেজ দিয়ে সহায়তা করেনি। এখন কেন এত মানুষ?’

বোনকে কারা খুন করতে পারে বুঝতে পারছেন না সালেহা। বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব পরিবার থেকে উঠে এসেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করে কোনোমতে চলছি। কারও সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা ছিল না। তবুও কেন আমার ছোট্ট বোনটাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হলো।’

মারজানারা পাঁচ বোন। বাবার মৃত্যুর পর তার মায়ের আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে হয়। সেখানে এক বোন ও এক ভাই আছে। তবে সবাই একসঙ্গেই থাকতেন।

পরিচিত কেউই এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে সন্দেহ করছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, ‘খবর নিয়ে জানলাম ও খুবই মিশুক ও চঞ্চল ছিল। আশপাশের সবাই তাই তার সঙ্গে কথা বলতো। আমরা হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে চাই। এ জন্য আশপাশের এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করছি। সবকিছুর পর পুরোপুরি নিশ্চিত হবো কারাই এমন নির্মম হত্যাকণ্ড ঘটিয়েছে?’

তবে সন্দেহ হওয়ায় দুই তরুণকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

এদিকে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বর্ষার লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

বর্ষা জামালখান কুসুম কুমারী স্কুলের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাধে জামালখানের বাসায় ভাড়া থাকতন। তাদের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি বলে জানা গেছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.