আমি এসি রুমে বসে থাকার লোক নই : মেয়র শাহাদাত
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে স্বনির্ভর করার মাধ্যমে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটি হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে জানিয়ে নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, আমি এসি রুমে বসে থাকার লোক নই। দ্রুত সময়ে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে প্রোগ্রাম দিবো। আমাদের এখন প্রধান যে সমস্যা সেটা হচ্ছে আমাদেরকে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি সমস্ত নাগরিককে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিসহ মশা নিধন করা হবে। লার্ভিসাইড কিলিং করার যে স্প্রে করা হয়, আমি যখন এসেছি এই লার্ভিসাইডের কোয়ালিটি একটু টেস্ট করতে চাই। এমন কোন স্প্রে আমি চাই না যে স্প্রে দিয়ে মশা লাফ দিয়ে উঠে যাবে এবং মশা মরছে কিনা সেটা দেখতে হবে। মশা না মরলে এই ধরনের ওষুধ কিন্তু আমি গ্রহণ করব না।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের লালদীঘিপাড়স্থ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
মেয়র বলেন, আমি নিজেই স্পটে যাব। একদিন এক-এক ওয়ার্ডে পরিদর্শন করবো। আমার সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানের লোকজন এবং ডেঙ্গু সেল নিয়ে কাজ করছেন তারাও থাকবেন। আমি প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরবো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম নিজে প্রত্যক্ষ করবো। আমি প্রতিটা ওয়ার্ডে গিয়ে স্বশরীরে তাদের দেখতে চাই। আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি যদি কাউকে আমি না দেখি তাদের চাকরি হয়তোবা নাও থাকতে পারে। আমাকে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। কারণ আমি বারবার বলছি আমি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি রাজনীতিবিদ তবে সে রাজনীতি সিটি কর্পোরেশনের বাইরে। আমি আমার সমস্ত নেতাকর্মীদের এখানে অনেকেই আছে তাদের আমি বলতে চাই আপনারা আমাকে কাজের সময় ডিস্টার্ব করবেন না। আপনাদের সাথে আমি রাজনীতি করব সন্ধ্যা ৫টা’র পর। ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কোন ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ আলাপ-আলোচনা নিয়ে আমার কাছে আসবেন না। আমি এটা স্পষ্ট করে বলছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয় একজন সদালাপী, অত্যন্ত কর্মঠ লোক। গত কয়েকদিন আমি মন্ত্রণালয়ে উনার সাথে সময় কাটিয়েছি যদিও সেখানে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থাকার কথা। ৮৫ বছরের বয়স্ক একজন লোক দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছেন এবং রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। গতকালও রাত ৮টা পর্যন্ত আমাদের সাথে ডেঙ্গু নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছে কাজেই এত বয়সে যদি একজন লোক যদি কষ্ট করতে পারে আমরা কম বয়সে কেন কাজ করতে পারবোনা।
তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে কাজের প্রতি সিনসিয়ারিটি এবং কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। তাই আজকে আমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উপর জোর দিতে চাচ্ছি। চসিকের দেয়া দোকানের সামনে একটা একটা বিন বসিয়ে দিবেন। দোকানদারগণ সেই বিনে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন। সবারই উচিত নিজের আঙ্গিনাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। আপনার সামনের যে উঠান আছে সে উঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব আপনাদের। আর বাকিগুলো আমি করব কাজেই আপনাদের দোকানের সামনে যদি কোন ময়লা পড়ে থাকে তাহলে আমি কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
মেয়র বলেন, আমি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করবো। ইতিমধ্যেই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় করার জন্য গত ১৫-২০ দিন ঢাকাতে অবস্থান করেছি। আমি বেশ কয়েকটি টকশো করেছি এবং এইসব মন্ত্রণালয়ের যারা উপদেষ্টা আছে তাদের কথা বলেছি যে এটার জন্য যে জিনিসটি খুবই দরকার সেটা হচ্ছে যে সিটি গভর্মেন্ট বা নগর সরকার। যদি সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে নগর সরকার হয় তাহলে সমস্ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স যদি আমরা ঠিকমত পাই ইনশাআল্লাহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে বেতন দেওয়ার জন্য আর কোন সমস্যা হবে না কিন্তু ওই হোল্ডিং ট্যাক্সও আমরা কিন্তু পাচ্ছি না। বিভিন্ন কারণে অনেকেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে। নাগরিকরা আপিল করতে করতে সমাধান না পেয়ে অনেকেই ৩০-৪০% কর দিচ্ছেন। মাঝখানে একটা গ্রুপ সেখানে গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে এদিক ওদিক করে টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনকে আপনারা অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাবেন না। এ বিষয়টার সমাধান করতে হবে।
চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, একসময় দেখতাম যে মেমন হাসপাতালে প্রচুর রোগী চাইল্ড এন্ড ম্যাটারনাল ফ্যাসিলিটিস এর জন্য আসত। এটা চট্টগ্রামে এক নাম্বার ছিল। আমি ওই এক নাম্বার জায়গায় মেমন হসপিটালকে নিতে চাই এবং ৪১ ওয়ার্ডে যেসব ছোট ছোট হেলথ রিলেটেড সেন্টার গুলো আছে, ডিসপেন্সারি; এগুলো আরো একটিভ করতে হবে। প্রয়োজনে সেখানে একটা ছোট্ট ছোট অপারেশন থিয়েটার করে দিয়ে, ছোট ছোট যে সার্জারি গুলো হয় সেগুলো আমরা সেখানে করতে পারি। আমি বলছি আমি যাব, আমি হাটবো কোন সমস্যা নাই। আমি সময় দিব। সিটি কর্পোরেশনকে আমি একটা পরিবর্তনের জায়গায় নিয়ে আসতে চাই।
শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে মেয়র বলেন, আপনারা জানেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়ে করা। আজকে সেটা দখল হয়ে গেছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উদ্ধার করব ইনশাল্লাহ। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সেটা আমি করব। গত ১৬ টি বছর যেটা হয়েছে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়নি। আমরা চাই একটি মেধাবী জাতি তৈরি করে দিতে। আমাদেরকে একটা মেধাবী জাতি তৈরি করতে হলে ডায়েট নিউট্রিশন ইজ ভেরি ইম্পরটেন্ট। এগুলোই কিন্তু আমাদেরকে প্রতিটি স্কুলে শিখাতে হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.