গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির অবৈধ সংযোগ ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ

১৪

পাহাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ না দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবেদন দিতে হবে। এছাড়া প্রতি ১৫ দিন পরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে তথ্য দিতেও নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।

বৃহস্পতিবার ( ২০ জুন ) বিকেলে নগরের সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ  নির্দেশ দেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে ব্যবস্থা নিলে হবে না। এর পূর্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাহাড়কাটা বন্ধে পাহাড়ের মূল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের সঠিক ব্যবহার করে পাহাড়ে কারা ঘরভাড়া দেয়, কারা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুৎ বিভাগ, ওয়াসা ও কেজিডিসিএলসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।  এছাড়া  অভিযানের তথ্য ১৫ দিন পর পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি।

সভায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, গত এক বছরে নগরীর ২৬ পাহাড়ে ৫১টি অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ একর সরকারি খাস জায়গা। পাহাড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে ১১টি পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এখন পাহাড়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে নগরের পাহাড়গুলোর মালিকানায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে লোকজনকে বারবার সরিয়ে নেয়ার পর আবার সেখানে ঘরভাড়া নিয়ে লোকজন বসবাস করে। এসব অবৈধ বসতিতে গ্যাস, বিদ্যাৎ ও পানির সংযোগ দেয়া হয়ে থাকে। তারা কিভাবে গ্যাস, বিদ্যাৎ ও পানির সংযোগ পায়, কারা দেয় এসব ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাহাড়কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে ভূমিকা নিয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা বলেন, দিনে রাতে পাহাড় কাটে কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয় না। পাহাড়ে অবৈধভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ থাকলেও কোন বিভাগেই ব্যবস্থা নেয়নি। যার কারণে নগরের পাহাড়গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদপ্তরেই দায়ী। এই চার সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পাহাড় ধস ও ঝুঁকি দুটোই কমে যাবে।

এসময় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য  ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, এই মূহর্তের সংবাদ হচ্ছে নগরীর আকবরশাহ এলাকার আরেফিন নগরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষথেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানা নেই। এ ছাড়া পাহাড় কাটালেও মূল মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে মামলা দেয়া হয় শ্রমিক-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে। এ কারণে মূল মালিকরা অধরা থেকে যায়। তাই পাহাড়কাটা বন্ধে আসল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নিতে হবে। পাহাড়কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনে যাবজ্জীবন সাজা রেখে একটি বিধান করা হোক।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, আমরা অভিযানের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যেখানে পাহাড়কাট দেখি, সেখানে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিই।

বিদ্যুতের পাহাড়তলী বিতরন শাখার প্রকৌশলী তৌফিকুল আলম বলেন, পাহাড়ে  দিনের বেলায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি। রাতে আবারও হুকিং করে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয় তারা। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বার্হী প্রকৌশলী সজীব বড়ুয়া বলেন, আমরা পাহাড়ে কোনো অবৈধ পানির সংযোগ দিইনি। যদি কোনো কারণে কোন অবৈধ সংযোগ থাকে তাহলে আমরা সেটি বিচ্ছিন্ন করবো।

সভায় কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের কর্ণফুলি গ্যাস থেকে গ্যাস লাইন দেয়ার সময় মালিকানা যাচাই-বাচাই করে সংযোগ দেয়া হয়। এরপরও অবৈধ সংযোগ থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় জানানো হয়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে সম্ভাব্য ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধস রোধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একাধিক টীম চট্টগ্রাম মহানগরসহ উপজেলাগুলোতে কাজ করছে। পাহাড়ের আশেপাশের স্কুল, কলেজ মসজিদ, মাদ্রাসাগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে তাদের স্ব স্ব এলাকায় নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি সুসমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ সকল স্বেচ্ছাসেবী দলকে সক্রিয় রাখা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.