দ্বাদশ সংসদের যাত্রা শুরু

২৮

রেকর্ড সংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিয়ে গঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে অধিবেশনের শুরুতে প্রথমে স্পিকার ও পরে ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার পদে অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু পুনর্নির্বাচিত হন। নির্বাচন শেষে টানা চতুর্থবার স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) অধিবেশনে শিরীন শারমিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানান।

একাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার আবারও একই পদে প্রার্থী হওয়ায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। নতুন সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দেশি-বিদেশি কূটনীতিকি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভিআইপিদের আত্মীয়-স্বজনসহ পাঁচ শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর সংসদের অধিবেশন আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

অধিবেশনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকারের শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী স্পিকার পদে নির্বাচন হয়। স্পিকার পদে আবারও ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। এরপর সংসদে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। এরপর স্পিকারের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য মুলতবি করা হয়।

এদিকে, সংসদের প্রথম অধিবেশনকে ঘিরে পুরো সংসদ ভবন নবীন-প্রবীণ সংসদ সদস্যদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। ৩০০ আসনের মধ্যে ২২৩ আসনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকারি দলের আসনে বসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর সংসদীয় ইতিহাসে এবারই প্রথম রেকর্ড সংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য দ্বাদশ সংসদে বসেছে। উদ্বোধনী অধিবেশন দেখতে ভিআইপি গ্যালারিসহ দর্শনার্থী গ্যালারিও ছিল পরিপূর্ণ।

সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে টানা চতুর্থবার নির্বাচিত স্পিকারকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ গ্রহণ শেষে সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় আসেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন হয়। এ পদে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর নাম প্রস্তাব করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলাম ও সমর্থন করেন মকবুল হোসেন। প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সংসদ সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ বলে সমর্থন জানান। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন

ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন শেষে নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তারা হলেন, এবি তাজুল ইসলাম, শাহাব উদ্দিন, আ ফ ম রুহুল হক, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ ও উম্মে কুলসুম। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে নামের অগ্রবর্তিতা অনুসারে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা সংসদের বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন।

শোক প্রস্তাব উত্থাপন

সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়নের পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি পেশ করেন। শোক প্রস্তাবে কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

রাষ্ট্রপতির ভাষণ

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভাষণ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সংসদ অধিবেশনে আহ্বান করেন। বিউগল বাজানোর মধ্য দিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান। এরপর শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। স্পিকারের পাশের আসনে বসেন রাষ্ট্রপতি। এরপর নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই ছিল রাষ্ট্রপতির জাতীয় সংসদে প্রথম ভাষণ।

অধিবেশন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানাতে ভিড়

অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ আগে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করেন সংসদ সদস্যরা। সেখানে সরকার দলীয় এমপিদের চেয়েও স্বতন্ত্র এমপিদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা গেছে। জাতীয় পার্টির দুই-একজন এমপিকেও প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ঘিয়ে রঙের জমিনে বেগুনি আঁচল ও পাড়ের জামদানি শাড়ি পরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় সিটে আসনে আগে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে জড়ো হন সংসদ সদস্যরা। তারা সবাই সংসদ নেতাকে সালাম দেন। কয়েকজন এমপিকে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়া শাহজাহান ওমরকে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়। পরে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। পরে তিনিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীকে সরকারদলীয় এমপি ছাড়াও স্বতন্ত্র এমপিরা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। ভিড়ের কারণে যারা কাছে এসে সালাম করতে পারেননি, তারাও দূরে দাঁড়িয়ে সালাম দেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সবাই একদিকে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন কক্ষে সদস্যদের আসন বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি; তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সবাই একদিকে বসেছেন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা যারা এবার মন্ত্রী হননি, তারা আগের মতো সামনের সারিতেই বসেছেন। আর মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর পেছনের সারিতে, তার পেছনে বসেছেন প্রতিমন্ত্রীরা।

এমপিদের সেলফি

চলতি সংসদে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন শতাধিক। প্রথম অধিবেশনে যোগ দিয়ে তারা সেলফিতে মেতে ওঠেন। পাশাপাশি এক এমপি আরেক এমপির ছবি তুলে দেন। কেউ কেউ সংসদের একপাশে দাঁড়িয়ে পুরো অধিবেশন কক্ষের ছবি তোলেন। বিকেল ৩টায় অধিবেশন শুরুর সময় নির্ধারিত থাকলেও দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে অধিবেশন কক্ষে আসতে শুরু করেন এমপিরা। প্রথমে তারা নিজেদের আসন খুঁজে নেন। এরপরই মেতে ওঠেন ছবি তুলতে। পরে একাধিক এমপিকে ফেসবুকে সংসদ অধিবেশন কক্ষে তোলা সেলফি ও ছবি আপলোড করতে দেখা যায়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.