কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে, ৭শ ফুট থাকবে সমুদ্রে

৪,০০৯

কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে অনেক চিন্তা-পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, আর কক্সবাজার নিয়েতো আরও বেশি। কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ, পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যান্ত আধুনিক শহর। সেভাবেই পুরো কক্সবাজার শহরকে উন্নত-সমৃদ্ধ করবো।

এসময় কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তে যুক্ত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান, কক্সবাজারের সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।

বিমানবন্দরটির প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে। যা রাজধানীর হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের (১০ হাজার ৫০০ ফুট) চেয়েও বেশি। এর ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৪-এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এর ফলে এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে। এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দর যাত্রা শুরু করবে।

বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এজন্য বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের সম্প্রসারণ, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড, লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ বেশ কিছু কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এখনও চলমান রয়েছে অনেকগুলো কাজ। দেশে প্রথমবারের মতো কক্সাবাজারের সমুদ্রবক্ষে নির্মাণ করা রানওয়ের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৫শ’ ৬৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্প পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে, ৭শ ফুট থাকবে সমুদ্রে

বেবিচক সূত্র জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর নির্মিতব্য এ রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। এই রানওয়ের ৭০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন-জেভি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান সাংবাদিদের ব্রিফিংকালে জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করতে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠ ভরাট করে এ কাজটি করা হচ্ছে। এ বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে এভিয়েশন হাব। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেন এখানে বিমান নামতে পারবে, সুপরিসর বিমান ওঠানামা করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তিনি বলেন, এ বিমানবন্দরের আগের রানওয়ে ছিল ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট, সেখান থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা হয়। এটির কাজ উদ্বোধনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দেন, এই বিমানবন্দরের রানওয়ে ১২ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১৭০০ ফুট ভরাট করে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের অনেক আধুনিক দেশ এটি করতে পারেনি। জাপান, চীন, কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এটি সম্ভব হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কক্সবাজারের মহেশখালী চ্যানেল ভরাট করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি হয়ে গেলে ৭৭৭,৭৪৭ সহ আরও বড় পরিসরের বিমান দিন-রাত এখানে অবতরণ করতে পারবে।

বেবিচক সূত্র মতে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে সরাসরি পূর্ণ লোডে সুপরিসর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা, সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ ক্যাট-১ লাইটিং সিস্টেম সংস্থাপনের ফলে রাত্রিকালীন বিমান পরিচালনা, বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.