সামুদ্রিক মাছ থেকে আর শুটকি নয়, এবার তৈরী হবে স্বাস্থ্যসম্মত “সুরিমি”

৩৯

মাছের কিমা থেকে ‘সুরিমি’ পণ্য তৈরী করে প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। গবেষকরা আরো বলেন, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার ছোট সাদা সামুদ্রিক মাছ (জিউফিশ ) গুলো কীটনাশক ব্যবহার করে শুটকি বানানোর পরিবর্তে স্বাস্থ্যসম্মত সুরিমি তৈরী অর্থ্যাৎ প্রক্রিয়াজাত মাছের পেস্ট, ইমিটেশন ক্র্যাব স্টিক এবং সি-ফুড স্ন্যাকস, সিঙ্গারা, সমুচা, ফিশ বল, ফিশ কেক, ফিশ বার্গার, ফিশ রোল সহ নানা মুখরোচক খাবার তৈরীর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের সহায়তায় অনুষ্ঠিত একটি গবেষণা প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে গবেষকগণ এই তথ্য জানান। সুরিমি ভিত্তিক পণ্য উদ্ভাবনের সম্ভাবনা তুলে ধরতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জাতীয় কর্মশালা ও খাদ্য মেলার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান। এতে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল গবেষণা কার্যক্রম তুলে ধরেন।
এই খাদ্য মেলায় উৎপাদিত সুরিমি ভিত্তিক বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিশেষ করে ফিশ বল, ফিশ কেক, ফিশ রোল, ফিশ নাগেট, ফিশ বার্গার এবং ফিশ কাবাব ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই সুরিমিভিত্তিক এই খাদ্যপণ্য সমূহ উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ওপর প্রেজেন্টেশন দেন সিভাসু’র কোষাধ্যক্ষ এবং প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো: কামাল। প্রেজেন্টেশনে তিনি গবেষণা কার্যক্রম বিস্তারিত তুলে ধরেন। এই সময় তিনি বলেন, মাছের মাথা, কাঁটা ও আবর্জনা বাদ দিয়ে যে অংশ থাকে তা দিয়ে যে পেস্ট বা কিমা তৈরি হয় তাকে সুরিমি বলে। এই সুরিমি দিয়ে সিঙ্গারা, সমুচা, ফিশ বল, ফিশ কেক, ফিশ বার্গার, ফিশ রোল ইত্যাদি নানা মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। জাপান, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের মতো দেশে এটি বহুদিন ধরে জনপ্রিয় হলেও, বাংলাদেশে এখনো এটি একটি নতুন ধারণা। তিনি আরও বলেন, মাছের পেস্ট বা কিমা থেকে তৈরি ‘সুরিমি’ পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
সিভাসু’র পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) প্রফেসর ড. মো: ইউসুফ এলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শেখ আহমাদ আল নাহিদ, মৎস্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন , মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর চট্টগ্রামের উপ পরিচালক ড. মঈন উদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সিভাসু’র ফিশিং ও পোস্ট-হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো: ফয়সাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রকল্পের সহকারী প্রধান গবেষক ও হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক চয়নিকা পন্ডিত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন,‘সিভাসু’তে ফিশারিজ অনুষদের যাত্রার শুরু থেকে আমরা অনবরত দেশের মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নে শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমরা চাই এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আমরা চাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে। বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য অধিদপ্তর এবং ফিশিং ট্রলার মালিকদের সমন্বয়ে একযোগে কাজ করলে এই প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, মাছ ধরার ট্রলার ও সুপার চেইনের প্রতিনিধিবৃন্দ, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা , সিভাসু’র শিক্ষক এবং প্রজেক্ট টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.