র্যাবের কাছে ঘাতক স্বামী সুমনের দাবী, স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিল, এতে ভয়পেয়ে সে স্ত্রীকে ১১ থেকে ২০এর অধিক টুকরো করে
চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রৌফাবাদ এলাকায় স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩২) কে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ১১ থেকে ২০ টুকরো করে গুম করার চেষ্টার প্রধান আসামি ঘাতক স্বামী সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার গ্রেফতার নিয়ে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব চট্টগ্রামের অধিনায় লে. কর্ণেল মো: হাফিজুর রহমান বলেন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বিজয়নগর থানার ফুলবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্ত্রীকে টুকরো টুকরো করে হত্যার দায়ে স্বামী মো. সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয় । র্যাবের কাছে ঘাতক স্বামী সুমন দাবী করেছে, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিল, সে ভয় পেয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করার চেষ্টা করেছিল। তবে র্যাবের কাছে সুমনের এই গল্প বিশ্বাস হয়নি ।
র্যাব অধিনায়ক বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদের উদ্বৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, গত ৯ জুলাই রৌফাবাদ পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্ল্যাটে ঘাতক স্বামী ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে নিজ স্ত্রীকে ১১ থেকে ২০ টুকরো করে হত্যার পর গুম করার চেষ্টা করে ।
১০ তলার ফ্ল্যাট বাসা থেকে দুর্গন্ধ ও অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখে বাড়ীর সিকিউরিটি গার্ড জিজ্ঞাসা করলে সুমন এলোমেলো কথাবার্তা বলে সিকিউরিটি গার্ডকে বাসায় প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। সিকিউরিটি গার্ড মশিউর রহমান জোরপূর্বক সুমনের বাসায় ঢুকে রুমের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ, বাথরুমের ভিতরে রক্তমাখা কাপড় এবং কমোডে মাংস দেখতে পেয়ে বাসার বাইর থেকে তালাবদ্ধ করে দেয়। এতে ঘাতক সুমন বাসার গ্রীল ভেঙ্গে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী লোকজন এবং পুলিশ এসে নিহত ফাতেমা বেগমের (৩২) ক্ষত-বিক্ষত শরীরের অংশবিশেষ এবং খাটের নিচ হতে পায়ের অংশ ও ফ্রীজ থেকে মাথা উদ্ধার করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো: হাফিজুর রহমান আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক স্বামী র্যাবের কাছে বলেছেন, সে নাস্তা আনতে বাইরে গেছিল, পরে বাসায় ফিরে দেখতে পান তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে, সেই ভয়পেয়ে স্ত্রীকে ১১ থেকে ২০ এর অধিক টুকরো টুকরো করে গুম করার চেষ্টা করে। তবে ঘাতক সুমনের এই গল্প আপত দৃস্টিতে র্যাব গ্রহণ করতে পারেনি বলে জানান। রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্ত্রীকে খুন এবং লাশ টুকরো টুকরো করার প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে র্যাব অধিনায়ক মনে করেন।
এলাকাবাসী এবং নিহত ফাতেমা বেগমের আত্মীয়রা জানান, ১০ বছর পূর্বে তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। এরপর সুমন সৌদি আরব যায় কিন্ত ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম মহানগরে নিজে একটি পিকআপ কিনে চালায়। সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসার পর স্ত্রীর পরকিয়ার অভিযোগ এনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। এ নিয়ে একাধিকবার উভয় পরিবারের মধ্যে আপোষ মিমাংসা করা হয়। গত ৯ জুলাই রাতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক তার বাসায় আসছে এই অভিযোগে এনে আবারও বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সুমন বাসায় থাকা দুটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ১১ থেকে ২০ এর অধিক টুকরো করে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.