চট্টগ্রামের পাহাড়খেকো সাবেক কাউন্সিলর জসিমের স্ত্রী কারাগারে
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে (৪০ ) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একটি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর আগে গতকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডবলমুরিং থানা পুলিশ নগরীর আকবর শাহ থানার এ কে খান মোড়ে গ্রীন গুলবাহার টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. রফিক আহমেদ জানান, , ‘তাসলিমা বেগম আমাদের থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার তদন্তে প্রাপ্ত সন্ধিগ্ধ আসামি। সোমবার আকবর শাহ থানা পুলিশের সহায়তায় এ কে খান মোড়ে গ্রীন গুলবাহার টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে আত্মগোপনে থাকা তাসলিমাকে গ্রেপ্তার করি। বিকেলে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।’
এর আগে সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম আত্মগোপনে আছেন, এমন খবরে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতভর নগরীর আকবর শাহ থানার ওই টাওয়ার ঘিরে অভিযান চালায় পুলিশ। রাতভর ভবনটির প্রতিটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে অবশ্য জসিমকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগরীর ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের সামনে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে হামলা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এতে রবিন নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে তিনি ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীনুর আলম তদন্তে তাসলিমা বেগমের সম্পৃক্ততা মিলেছে উল্লেখ করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন।
জহুরুল আলম জসিম চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত। একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জসিমকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে মাসখানেকের মধ্যেই আবার তিনি পদ ফিরে পান।
পাহাড় কাটার অভিযোগে জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা আছে। ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে একজন নিহত ও চারজন আহত হন। ১১ এপ্রিল সেই পাহাড় কাটার অভিযোগে জহুরুল আলম জসিম ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন প্রকৌশলীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদফতর। এরপর ২৯ এপ্রিল নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন গরুর খামার গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
এর আগে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আকবর শাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদফতর।
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে গেলে জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের হামলার শিকার হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। তারা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোঁড়ে ও হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় রিজওয়ানা হাসান আকবর শাহ থানায় জসিমসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ জুন ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে জহুরুল আলম জসিমকে ১ নম্বর আসামি করা হয়।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.