এবার ডুবলো সাবেক মেয়রের বাসা
টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল এলাকা কোমর থেকে বুক পরিমাণ পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসীসহ পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। জলাবদ্ধতায় প্রতিবছরই বর্তমান সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়ি ডুবে যায়। এবার ডুবল সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর পাঁচলাইশ এলাকার বাসা।
এ নিয়ে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী আক্ষেপ করে চট্টগ্রাম২৪ নিউজকে বলেন, গত ৩৫-৪০ বছরে আমার পাঁচলাইশ এলাকার বাসায় পানি উঠেননি। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ ৭০ ভাগ শেষ করেছে। এ অবস্থায় গত দুবছর ধরে বৃষ্টি হলেই আমার বাসায় পানি উঠতে শুরু করে। গত রাত থেকে একদিনের বৃষ্টিতে একেবারে ডুবে গেছে আমার বাসা। পানিতে ভাসছে বাসার আসবাবপত্র ও গাড়ী।
তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এই সাবেক মেয়র বলেন, শুধু পাচঁলাইশ নয়, আজ চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানির তলিয়ে গেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ কতোদিনে শেষ হবে , সেই সাথে নগরবাসী এ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কখন পরিত্রাণ পাবে আমিসহ চট্টগ্রামবাসী জানতে চাই।
প্রসঙ্গত; নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে চট্টগ্রামের দুই সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।প্রতিবছরেই বর্ষার আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরবাসীকে নানা আশার বাণী শোনায় এ দুই সংস্থা। তবে সত্যিকার অর্থে কোন বছরেই এই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী। এবারও ঠিক একই অবস্থা । ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে ) গভীররাত থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল এলাকা এখন পানির নীচে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরবাসীর অনেকেই। তাদের প্রশ্ন আসলেই জলাবদ্ধতার এই অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি পাবো!
মুরাদপুরের পোশাক শ্রমিক আফজাল চট্টগ্রাম২৪ নিউজকে বলেন, আসলে জলাবদ্ধতা একটা আমাদের অভিশাপ। যে মেয়র আসুক, সিডিএ চেয়ারম্যান আসুক। কেউ এই জলাবদ্ধতা নিয়ে ভাবে না। শুধু উন্নয়নের কথা মুখে বলে। কাজের কাজ কেউ করেনা।
পাঁচলাইশ এলাকার বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা মো. সাঈফুদ্দিন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে শুনছি। এবছর কমবেজলাবদ্ধতা । প্রতিবছরেই শুনি একই কথা। আসলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে । যার কারণে প্রতিবছর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আমি কর্মজীবী মানুষ এখনো অফিসে যেতে পারিনি পানির জন্য।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবছরেই আশার বাণী শুনি। আবার প্রতিবছরেই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জলাবদ্ধতার এই অভিশাপ থেকে আমরা আসলে কবে মুক্তি পাবো!
এদিকে সোমবার ( ২৭ মে ) সকালে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর ইপিজেড, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, পাঁচলাইশসহ নগরীর বেশিরভাগ এলাকা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে চকবাজরের কাঁচা বাজার বসতে পারেনি। এই এলাকার দোকানগুলোতে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়েছে। নগরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী রোড সংলগ্ন জেলেপাড়াও তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে। এতে দুর্ভোগে পড়ে সেখানকার ৩ শতাধিক পরিবার।
আমবাগান আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. মহসিন চট্টগ্রাম২৪ নিউজকে বলেন, রোববার (২৬ মে ) দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে পাহাড়ধস হতে পারে
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রামের ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও পাহাড়ধস হতে পারে।’আগামী দুদিন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.