দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথমবারের মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল উদ্বোধন হচ্ছে কাল শনিবার। এই স্থপনা ঘিরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম শহর ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ রূপ নেবে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ দিয়ে দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করবে টানেলটি।
ওই দিন দেশের প্রথম এই টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ভোর ৬টা থেকে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে টানেল উদ্বোধন করবেন। এরপর আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার টানেল নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, এরই মধ্যে টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, যার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হবে শনিবার। টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারা প্রান্তে ইপিজেড মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতুমন্ত্রী বলেন, টানেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। চট্টগ্রাম মূল শহরের সঙ্গে সাগর ও বিমানবন্দরেরও দূরত্ব কমে আসবে। অর্থনীতির গতিপথ আরও গতিশীল করতে এই টানেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন করাই এই টানেল নির্মাণের অন্যতম কারণ। এতে বাঁচবে খরচ ও সময়।
প্রকল্প নথি বলছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে আগলে রেখেছে যে কর্ণফুলী, তার বুক চিরে তৈরি হয়েছে ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ।
এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৫ সালের ৩০জুন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশে সরকার অর্থসহায়তা দেয় ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে সহায়তা নেওয়া হয় ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে এ পথে। নদীর মধ্য ভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ সড়কটি অবস্থান করবে মাটি থেকে ১৫০ ফুট গভীরে। এর নির্মাণকাজ শেষ করে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, এ টানেলের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। তিনি আরও বলেন, স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে।
শুধু টানেল নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগর, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অনেক মানুষের কর্মস্থান হবে। বদলে যাবে চট্টগ্রাম।
জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজারে আমানত শাহ সেতু হয়ে যেতে অনেক সময় লাগতো। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল হয়ে যেতে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের সে পথ তিন মিনিটেই যাওয়া যাবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চট্টগ্রামে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.