সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৬
সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কারখানাটির বাইরের এক শ্রমিকসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে দগ্ধ ও আহত ৩৫ জনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় বিএসবিএ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় কদমরসুলপুর (কেশবপুর) এলাকার ওই অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আগ্রাবাদ, সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের নয়টি পৃথক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নির্বাপণে করে।
এদিকে বিস্ফোরণে পর প্ল্যান্টের চারপাশে আগুনের ভয়াবহ দাবানলের সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণে কারখানাটির ভেতরে থাকা দুটি শেড বিধ্বস্ত হয়। পাশাপাশি কারখানার অফিস কক্ষের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কারখানাটির আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের এলাকার প্রায় শতাধিক ভবনে ফাটলের সৃষ্টি হয়। ফায়র সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাত সাড়ে আটটায় আজকের মতো তারা উদ্ধার কাজ শেষ করেন। কাল সকালে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।
এদিকে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম, সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ ও সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে কারখানাটির অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের এলাকায় কম্পনের সৃষ্টি হলে তাঁরা ভয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ সময় কারখানাটির ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলার পাশাপাশি ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান। পরে তাঁরা দ্রুত কারখানার ভেতরে ছুটে যান এবং আহত একাধিক শ্রমিককে উদ্ধার করে বাইরে বের করে আনেন। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পর সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করেন। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ থেকে আরও ইউনিট এসে আগুন নেভানোর পাশাপাশি হতাহতদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন জানান, বিস্ফোরণে তাঁদের ঘরের দরজা উড়ে যায়। ঘরে থাকা সব কাচের জিনিসপত্র ভেঙে যায়। এ সময় তাঁরা ভয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের পাশাপাশি আশপাশের লোকজন ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। তিনি অক্সিজেন প্ল্যান্ট কারখানার আগুনের কুণ্ডলী দেখে সেখানে দৌড়ে ছুটে যান। ভেতরে প্রবেশের পর ভেতরে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকে দুটি মরদেহ দেখতে পান। পাশাপাশি বিস্ফোরণে আহত হওয়া মানুষের আর্তনাদের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তিনি আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে গেলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁকে বের করে দিয়ে গেট বন্ধ করে দেন।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাত ১০টায় এ ঘটনায় ৬জন নিহত কবার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিস্ফোরণে অক্সিজেন প্ল্যান্টের ভেতরে ও আশপাশে ৬জন মারা গেছেন। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট কারখানায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা শুনে তাঁরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেন। তবে বিস্ফোরণের ঘটনার পর কারখানা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।
নিহতদের মধ্যে পলি নিউস চাকমা, মো. জমির, রতন, কাদের কারখানার কর্মী বলে জানা গেছে। এর বাইরে সালা উদ্দিন (৩১) লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্জ এলাকার মহিজল হকের পুত্র। অপর দিকে বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কদমরসুল বাজারে ছিটকে যাওয়া লোহার পাত মাথায় পড়ে শামসুল আলম ওরফে শামসু (৫৬) নামে ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই প্রান হারান। তিনি স্থানীয় সালেহ কাপের্ট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণে ৩০ জনেরও অধিক মানুষ আহত হন।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল জানান, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তাঁর নেতৃত্বে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করেন। তাঁদের পাশাপাশি কুমিররাও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের আরও পাঁচটি ইউনিট এসে আগুন নির্বাপণকাজে যোগ দেন। টানা দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণের পর কারখানটির বিধ্বস্ত শেডের ভেতরে প্ল্যান্টের চারপাশের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া হতাহতদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কী কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক জানান, সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে নুর হোসেন (৩০), আরাফাত (২২), মোশাররফ (৫২), ফেন্সি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬), জাহিদ হাসান (২৬), শামসুল আলম (৩৮) নাম জানা গেলেও অন্যদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.