পবিত্র হজ আজ

১৭৮

আজ পবিত্র আরাফাত দিবস। আজ পবিত্র হজ। এদিন প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের ১০ লাখ হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। কণ্ঠে তাদের সমস্বরে উচ্চারণ হচ্ছে- ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুক’। অর্থাৎ- ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এই উচ্চারণে সাদা এক টুকরো কাপড়ে শরীর ঢেকে তারা ফজরের নামাজের পর থেকেই রওনা দিয়েছেন পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে। এই সেই আরাফাতের ময়দান, যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই মরুর প্রান্তরে। গতকাল বৃহস্পতিবার মক্কায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই প্রখর রোদে হজযাত্রীরা অবস্থান করেন মিনায়। সেখানে রোদ আর গরমের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে ইবাদত বন্দেগিতে দিন ও রাত পার করেছেন।

সেখান থেকে আজ ভোরে তারা আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছুটে যাচ্ছেন আরাফাতের ময়দানে। মুখে মুহুর্মুহু উচ্চারণ করছেন- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

দীর্ঘ দুই বছর পরে আবার পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়েছে পবিত্র হজ। আগের দুই বছর করোনা মহামারির কারণে সীমিত আয়োজনে পালিত হয়েছে এই ইসলামিক রীতি। তবে এবার সৌদি আরব সরকার ১০ লাখ হজযাত্রীকে হজ করার অনুমতি দিয়েছে। বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার পর এই হজ নিয়ে উচ্ছ্বসিত হজযাত্রীরা। এর আগে পবিত্র কাবাঘরকে তাওয়াফ করে বুধবার থেকে হজযাত্রীরা মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে তুচ্ছ করে হজযাত্রীরা পবিত্র কাবা’কে তাওয়াফ করেছেন। এরপর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মিনায় ছুটে যান। সেখানে দিনের বাকি অংশ ও রাত অতিবাহিত করেন। অনলাইন আরব নিউজ বলছে, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। পবিত্র মক্কা নগরীতে এবং মদিনায় হজযাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৩টি হাসপাতাল ও ১৪৭টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। মিনায় হজযাত্রীদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে প্রস্তুত রাখা হয় ৪টি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র।

হজযাত্রীদের আইসিইউ সেবা দেয়ার জন্য কমপক্ষে এক হাজার বেড প্রস্তুত। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাদেরকে সেবা দেয়ার জন্য কমপক্ষে ২০০ বেড প্রস্তুত আছে। হজযাত্রীদের সেবা দিচ্ছেন কমপক্ষে ২৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। মিশরের চার সন্তানের মা ফাতিন আবদেল মোনিম (৬৫) বলেছেন, এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবে চলছে। অনেক পথ হেঁটেছি। দেখেছি সবাই নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাবান। মিশরের আরেক হজযাত্রী নাইমা মোহসেন (৪২)। বলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া এখানে আসতে পারা। বাকি আনুষ্ঠানিকতার জন্য আর যেন তর সইছে না। এখানে একটিই মাত্র সমস্যা তা হলো আবহাওয়া। অত্যন্ত গরম এখানে। এবার অনুমোদিত টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন এমন ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি। বাকিরা সৌদি আরবের। এর আগে ২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম হজ পালন করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে এই সংখ্যা পরের দুই বছর কমিয়ে আনতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

২০২১ সালে টিকা নিয়েছেন এমন শুধু ৬০ হাজার সৌদি অধিবাসীকে হজ করার অনুমতি দেয়া হয়। ২০২০ সালে হজ পালন করেন হাতেগোনা কয়েক হাজার মুসলিম। পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা চলে ৫ দিন ধরে। তার মধ্যে আরাফাতের দিবসকে ধরা হয় মূল হজ হিসেবে। মিনা থেকে এদিন ভোর থেকেই হজযাত্রীরা লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক ধনিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। তাদের সমস্বরে উচ্চারিত লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে আরাফাতের আকাশ বাতাস। এদিন পুরোদিন তারা ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। দুপুরে হজের খুৎবা শুনবেন। তারপর এক আযানে হবে জুমা ও আসরের নামাজ।

সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে যাত্রা করবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে আবার তারা এক আযানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। তারপর পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এদিন রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন তারা। তারপর শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার চক্কর দেবেন। আবার ফিরে যাবেন মিনায়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.