কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি পাঁচ বছরেও: উপেক্ষিত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা

২১৬

কর্ণফুলী নদী রক্ষায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তরা অভিযোগ করেছেন, ২০১৬ সাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন ও সহযোগি সংস্থা সাতটি নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি একটিও। ফলে প্রশাসনের সকল উচ্ছেদ নোটিশ ও নতুন করে দখলের সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রার্থনা করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতের দারস্থ হবার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন।

সোমবার (৩ জানুয়ারী) সকালে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার অভয়মিত্র ঘাট এলাকায় ভাসমান জলযানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে উঠা মাছ বাজার ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, বতর্মান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পরিচালক থাকাকালীন ২০১৮ সালে উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন। এছাড়াও চারবার উচ্ছেদ নোটিশ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন, চট্টগ্রাম সদর ও বন্দর ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার।

জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন প্রদত্ত উচ্ছেদ নোটিশে ভিত্তিতে গত নভেম্বরের ১২ তারিখ একমাসের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেবেন বলে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নেতাদেরকে জানিয়েছিলেন বর্তমান জেলা প্রশাসক। কিন্তু দুইমাস অতিবাহিত হলেও এখনও উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১০ সালে মামলাটি দায়ের হওয়ার পর মাননীয় হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদী ও তীর দখলকারী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। যার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালে কর্ণফুলী তীর জরিপ করে ২১৮১ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী নদী দখলকারী হিসাবে চিহ্নিত করে মাননীয় হাইকোর্টকে অবহিত করেন।

জেলা প্রশাসন প্রতিবেদন দেয়ার পর মামলা চলাকালীন সময়ে ২০১৬ সালে বিএস ১নং খতিয়ানের ৮৬৫১ দাগ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদী জাতীয় মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ০৮/১২/২০১৫খ্রিঃ তারিখে ১৫ বছরের চুক্তিনামা দিয়ে লিজ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তপক্ষ।

লিজ গ্রহিতাগণ কর্ণফুলী নদী দখল ও ভরাট করে মাছ বাজার ও বরফকল নির্মানকালে তা বন্ধ রাখতে ৮সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইংরেজী তৎকালীন চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন এবং একই তারিখে চট্টগ্রাম সদর সার্কেল ভূমি এর সহকারী কমিশনার আছিয়া খাতুন বিএস ১নং খতিয়ানের ৮৬৫১ দাগের ১৪৭.১০ একর জায়গা কর্ণফুলী নদী হিসাবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়ে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ বন্ধ ও ভরাট করে জাতীয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যানারে স্থাপনা নির্মান বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়। সেই সাথে মাছ বাজারকে বরাদ্দকৃত ১,৭৫,২৬৩ বর্গফুট বা ৪.০২৬৩ একর নদীর অংশে নতুন মাছ বাজার গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তা উচ্ছেদ করতে বলা হয়। জেলা প্রশাসনের সাথে ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনা দখল করে মাছ বাজার নির্মাণ বন্ধ রাখতে নোটিশ প্রদান করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও।

কিন্তু জেলা প্রশাসন ও ভূমি সদর সার্কেল সহকারী কমিশনারের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাছ বাজার নির্মাণ করে তা পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে জাতীয় মৎসজীবি সমবায় কর্তৃক কর্ণফুলী নদী ভরাট করে বরফ কারখানা নির্মাণ করতে থাকলে বন্দর ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা খোরশেদুল আলম বিগত ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে তা বন্ধ রাখতে নোটিশ প্রদান করে।
একই বছর ২৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মল্লিকা খাতুন কর্ণফুলী নদী ভরাট করে অবৈধভাবে নির্মিত ফিশারীঘাট সরিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়ে জেলা প্রশাসনকে নোটিশ প্রদান করেন। উক্ত পত্রে সমস্ত অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে অবহিত করতেও বলা হয়।

সর্বশেষ বিগত ২০/১২/২০১৯ তারিখে ফিরিঙ্গি বাজার মোড় থেকে মেরিনার্স পার্ক নতুন মাছ বাজার, ভেড়া মার্কেট থেকে বাকলিয়া চরের মোড় পর্যন্ত ৪৭ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। উক্ত নোটিশ প্রদানের পর দুই বছর অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে না জেলা প্রশাসন। যা মহামান্য হাইকোটের্র আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ভাসমান জলযানে ফিরিঙ্গিবাজার অভয়মিত্র ঘাট থেকে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলন চাক্তাই রাজাখালী খালের মোহনা হয়ে কালুরঘাট ব্রিজ হয়ে বাংলাবাজার গিয়ে শেষ হয়। এই সময় চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সংগঠকরা কর্ণফুলীর করুণদশা সরেজমিন সাংবাদিকদের দেখানোর পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ ও সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান।

এ সময় নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম পেয়ার আলী, নির্বাহী সদস্য জাফর আহমদ, লোকমান দয়াল, জসিম উদ্দিন, এরাশাদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.