নতুন প্রজন্ম তৈরী হও, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলনকালে কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী
এম. এ আজিজ স্টেডিয়াম গোল চত্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলিত হয় এবং একই সাথে বিজয় মঞ্চের কার্যক্রম সূচিত হয়। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলন মঞ্চের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আমজনতার এক আনন্দঘন আবেগ অনুভুতিমালায় জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে প্রধান অতিথি অপারেশন জ্যাকপট এর অধিনায়ক কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম ও বীর বিক্রম এবং বিশেষ অতিথি একাত্তরের অগ্নিক্ষরা মার্চ মাসে গঠিত আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ও উপ-প্রধান শাহ বদিউল আলম বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলনের অগ্নিশলাকা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রতিষ্ঠাতা এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর কনিষ্ঠ সন্তান বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইনামুল হক দানুর সন্তান কাজী রাজেশ ইমরানের হাতে হস্তান্তর করলেন তারা তা বিজয় শিখার টাওয়ারে স্পর্শ করা মাত্রই বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে।
তুমুল হর্ষধ্বনি ও শ্লোগানে মুখরিত এক আবেগ ঘন পরিবেশে কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, হে নতুন প্রস্তুত হও, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ। বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলনের সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ এবং বিজয় মেলার কর্মকর্তাগণ জাতীয় সংঙ্গীতের সূর মূর্চ্ছনায় জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পতাকা উত্তোলন করেন। এর পর পরেই বিজয় মঞ্চে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমোডর এ. ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম ও বীর বিক্রম বলেন, পৃথিবীর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এত ত্যাগ, এত রক্তঞ্জালি আর কোথাও নেই। এমনকি একটি ঘাতক অপশক্তি যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, যাদের কোন সভ্যতা মর্যাদা ও সুস্থতা নেই। বর্বরতা, বিকৃতি, পাশবিক দস্যুতা তাদের রক্তের প্রতিটি কণয়া মিশে গিয়ে ছিল বলেই আমরা মধ্যেযুগীয় অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিলাম এ থেকে ত্রাণ পেতে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র হয়েছিল এবং হানাদারদের আত্মসমার্পনে বাধ্য করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।
তিনি আরো বলেন পৃথিবীতে যুদ্ধ হয় মিলিটারী বনাম মিলিটারী, বাংলাদেশে যুদ্ধ হয় মিলিটারী বনাম সিভিলিয়ান। পৃথিবীতে কোন যুদ্ধে ইউনিফর্মধারী মিলিটারী সিভিলিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পনের নজির নেই। ১৯৭১ এর ষোলই ডিসেম্বর পাকিস্থানি মিলিটারী ফোর্স মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমার্পন করলেও তারা ছিলেন সিভিলিয়ান রিপ্রেজেন্টেটিভ। সবচেয়ে বড় কথা একটি সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি যুদ্ধ করতে করতেই সশস্ত্র হয়ে উঠে এবং তাদের কাছে হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক পরাজয় স্বীকার করাটা ইতিহাসেরই একমাত্র দুর্লভদৃষ্টান্ত। তিনি অপারেশন জ্যাকপট অভিযানের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা এবং কৌশলগত দিক গুলো তুলে ধরে বলেন, একাত্তরের ১৪ আগস্ট সফল অপারেশন জ্যাকপট অভিযান ছিলো টার্নিং পয়েন্ট অব দ্যা লিবারেশন ওয়ার। এই অপারেশনের আগে মুক্তিযুদ্ধের গতি কিছুটা শীথিল হয়ে পড়েছিল। এই অপারেশনের পর পরই পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। তারা বুঝে গিয়েছিল তাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ স্থল ও অন্তরীক্ষে হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হলেও সমুদ্র নদী পথ ছিলো তাদের জন্য অনেক নিরাপদ। কেন না সমুদ্র পথে তাদের বিদেশী দোসরদের সাপ্লাই লাইন নিরাপদ ছিল বলে যে ধারণাটি তাদের ছিলো তাতেই জ্যাকপট ছিড় ধরিয়ে দেয়, তিনি উল্ল্যেখ করেন অপারেশন জ্যাকপট একই দিন একই সময়ে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর নদী বন্দরে পরিচালিত হয়।
এই অভিযানে একই সঙ্গে ১৬০ জন নৌ কমান্ডো জীবন মৃত্যুর যুদ্ধে ঝাঁপ দিয়েছিল। এই সফল অভিযানে অংশগ্রহনকারী কোন নৌ কমান্ডো হতাহত না হলেও হানাদারদের নৌ বাহিনীর সিংহ ভাগ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল। এটাও পৃথিবীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি নতুন প্রজন্মের উদ্দ্যেশে বলেন, চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় আমি বহুবার অতিথি হয়ে এসেছি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক শক্তি কঠিন দুঃসময়ে এই বিজয় মেলা আমাদেরকে ঘুরে দাড়াঁবার শক্তি দিয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এখন জীবন সায়াহ্নে। তাই নতুন প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের কো-চেয়ারম্যান রাশেদ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও এ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রথমে করোনাকালে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইঊনুছ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নূর মোহাম্মদ চৌধুরী, নৌ কমান্ডো যুক্তরাষ্ট প্রবাসী আবু তাহের, নূরুন্নবী ও কামাল উদ্দিন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র।
সন্ধায় বিজয় মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান লোক ও গণ শিল্পী ফকির সাহাবউদ্দিন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.