খ্যাতিমান চিকিৎসক এল এ কাদেরী আর নেই

৪৬২

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারী বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী আর নেই (ইন্নাল্লিাহে … রাজেউন)।

রোববার (২৯ আগস্ট) বেলা ১১ টায় নগরের বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খ্যাতিমান এ চিকিৎসক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএম) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে কাদেরী স্যার অসুস্থ ছিলেন। উনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

ডা. এল.এ. কাদেরী বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার দু’বার নির্বাচিত সভাপতি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব সার্জনস্ এর সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জন’ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বহুবার চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

তার মৃত্যুতে চিকিৎসক সমাজে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এল এ কাদেরীর প্রথম জানাযা হবে আজ বাদ আছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মাঠে। দ্বিতীয় জানাযা হবে বাদ এশা দেওয়ান বাজার ফকির মোহাম্মদ জামে মসজিদ। কাল সোমবার সকাল ১১টায় তৃতীয় জানাযা হবে জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে। চতুর্থ জানাযা হবে ওইদিন বাদ আছর ফটিকা হাটহাজারী সরকারি রহমানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী ১৯৪১ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩৪৫, নবাব সিরাজদৌল্লা রোডস্থ পৈত্রিক বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম শহরেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৯ সালে কৃতিত্বের সাথে আইএসসি পাশ করার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এম বি বি এস এ ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এম বি বি এস ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে স্বর্ণপদকসহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তা সত্ত্বেও সরকার বিরোধী ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আইয়ুব-মোনায়েম সরকার তাঁকে স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত করেন এবং উচ্চ শিক্ষাতে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দেয় ৪ বছরের জন্য। এরপর ১৯৬৫ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে ১৯৬৮ সালের ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাউস সার্জন, সিনিয়র হাউস সার্জন ও ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৮ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চতর শিক্ষার জন্য ডা. এল.এ. কাদেরী লন্ডনে যান। সেখানে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭৮ সালে অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের লিখিত অনুরোধে স্বদেশে ফিরে আসেন। সে সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরবর্তীতে দেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ঢাকার নিউরোসার্জারী বিভাগে যোগ দিতে বললে ডা. এল.এ. কাদেরী স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিউরোসার্জারী বিভাগ খোলার সুযোগ দিতে অনুরোধ জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অনুরোধ রক্ষা করেন। সেই সময়েই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিউরোসার্জারী বিভাগ খোলা হয়। অধ্যাপক কাদেরী শুরু থেকে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত এই বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ইউএসটিসি’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.