দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সীমান্তবর্তী প্রতিপক্ষের কাছে কোনও অবস্থাতেই পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করতে বর্ডর গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশ মাতৃকার রক্ষায় তোমরা প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, ‘তোমরা আমাদের হতাশ ও নিরাশ করবে না। জেনে রাখবা, তোমাদের দেওয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে। তোমরাই হবে আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার ও কলেজে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্য তিনি এ আহ্বান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আজ তোমরা যে তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেছ তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল তোমাদের কঠোর প্রশিক্ষণ, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও অদম্য আগ্রহের ফলে। মনে রাখবে, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। তোমরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে তখন তোমাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার উপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে এ বাহিনী বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা এবং সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে আসছে।

বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায়ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সমগ্র দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা ছাত্র জনতার দাবির সঙ্গে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তি ও পরিবারকে সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছে।

আহত ছাত্র জনতাকে নিজস্ব উদ্যোগে চিকিৎসা সেবা ও তাদের পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিজিবি জনমানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীকে পরিণত করেছে। বিজিবির এ মহতী উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। ২৩ সপ্তাহের কঠোর ও কষ্টসাধ্য প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের সূচনা হলো।