জাতি এখন নির্বাচিত সরকার দেখতে চায় : আমীর খসরু

১৬

জাতি এখন নির্বাচিত সরকার দেখতে চায় উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জবাবদিহিতাহীন ও জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না। এজন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন প্রয়োজন। অন্তবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। যে সংস্কারে ঐক্যমত হবে না তা বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ হওয়ার পর হবে। জাতি এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেখতে চায়, নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঐতিহাসিক ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে নগরীর কাজীর দেউড়ি সংলগ্ন আলমাস মোড়ে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত র‌্যালিপূর্ব সমাবেশ এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, এ সরকারকে আমরা শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিব। আমরা অর্ন্তবর্তী সরকারকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়েছি। এ সরকার গণতান্ত্রিক মডেল ফিরিয়ে আনবে, তার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করব। আমাদের ঐক্য নষ্ট হতে দিব না। আওয়ামী লীগ উকিঝুঁকি মারছে। জাতীয় ঐক্য ভাঙা যাবে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচিত সরকার ও সংসদের দিকে যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাদের আমরা সমর্থন দিব, তাদের আমরা শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিব। আমরা এ সরকারকে যখন আসা মাত্রই সমর্থন দিয়েছি, এ সরকারকে আমরা এখনো সমর্থন দিচ্ছি। আমরা চাই এ সরকার গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। তার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করবো। আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। তারেক রহমান যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা অটুট থাকতে হবে। ঐক্য অটুট রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচনের দিকে যেতে, নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।

বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের জীবনে মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল ৭ নভেম্বর। ওইদিন নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ হল বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, জীবনের নিরাপত্তার বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিল বিএনপি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে নিয়ে। এর প্রতিবাদে জেলে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছিল উনাকে। এরপরের আন্দোলন তারেক রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। সমস্ত দেশের মানুষকে যুক্ত করে ছাত্র-জনতা সম্পৃক্ত হয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং সভা হয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ হয়েছিল। তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে তখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। আমরা যদি সেই অবস্থার সৃষ্টি না করতাম তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর যেত না। এখন অনেক গল্প শুনছি। শেখ হাসিনা পতনের নতুন নতুন গল্প শুনছি, গল্পে শেষ নাই। ওরা নাকি ওটা করেছে, সেটা করেছে।

জীবন দিয়ে আন্দোলন করেছে বিএনপি নেতারা উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, গুম, জেল ও হামলার শিকার হয়েছি আমরা। তখন তো তোমাদের কাউকে দেখিনি। আমাদের নেতাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে, পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। আমরা চেয়েছি শেখ হাসিনাকে বিদায় করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে। এখন চাই সবাই মিলে গণতন্ত্রের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটের তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে।

শেখ মুজিবুর রহমান বয়ান দিয়ে কিছুদিন ষ্বৈরাচারী রাষ্ট্র চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বয়ানে ছিল, বাংলাদেশকে এখন এক… না করলে দেশটা চলবে না, থাকবে না। এই বয়ান দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান দেশ চালিয়েছিল। সেটা থাকে নাই। জনগণের সমর্থন ছাড়া কিছু টিকে থাকে না। পরবর্তীতে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ আরেক বয়ান দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাকে আমরা পরাজিত করে পাঠিয়ে দিয়েছি’ — যোগ করেন আমীর খসরু।

তিনি আরও বলেন, জবাবদিহিতাহীন ও জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না। জনগণের কষ্ট বুঝবে না। জনগণের দুঃখকষ্ট বুঝতে হলে তাদের কাছে থাকতে হবে। দুবেলা খেতে পারছে কি না বুঝতে হবে। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো কিছু ঠিকে থাকে না। এরশাদ, হাসিনা পরাজিত হয়েছে স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে। তাদের আমরা পরাজিত করেছি। এখন চলছে আরেক বয়ান। বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে তা বয়ানের মধ্যে নাই। বাংলাদেশে কবে ভোট দিয়ে নির্বাচন হবে তা এখনের বয়ানের মধ্যে নাই। কবে গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেটি বয়ানের মধ্যে নাই। এখন বয়ান চলছে সংস্কারের বয়ান। ছয় বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া সংস্কারে কথা বলেছিল। একবছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনেও ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেই সংস্কারের সব কিছু আছে। আপনারা যা বলছেন তাও আছে, যা বলেননি তাও আছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.