‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির প্রস্তাবক চট্টগ্রামের সন্তান রেজাউল হক চৌধুরী আর নেই

৫০৫

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়ার প্রস্তাবক চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক আর নেই।

বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন)। তার ছেলে সাদীদ আর চৌধুরী বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

সাদীদ আর চৌধুরী জানান, আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব গুলশান আজাদ মসজিদে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। রেজাউল হক চৌধুরী এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।

১৯৫০ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার ভিংরোল গ্রামের মিয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক। চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য। পরে ১৯৬৭-৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

রেজাউল হক মুশতাক ১৯৬৮ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কলেজ শাখা, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্যাডে ‘আজব দেশ’ শিরোনামে নিজের সারথী (ছদ্মনাম) নামে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা মামলার প্রহসনমূলক বিচারে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় শোনার জন্য অপেক্ষায়, সেই সময়ে ঢাকা কলেজের এক ছাত্র, তাঁর পুত্র শেখ কামালের সহপাঠী রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবের জন্য নতুন এক উপাধির প্রস্তাব দিলেন। সেই উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’।

এরপরই মূলত ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সভায় ডাকসুর তৎকালীন ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

রেজাউল হক চৌধুরী জাতির জনকের জৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সহপাঠী ছিলেন। তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির নির্বাচিত কনিষ্ঠতম সদস্য, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৭ সাল), তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচিত সহ-দপ্তর সম্পাদক (১৯৭০ সাল), ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য, স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক (১৯৭২ সাল)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহ-সভাপতি (১৯৭৪ সাল)।

রেজাউল হক চৌধুরী কেএন হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সদস্য, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির তিন তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।

৬৯ এর গণআন্দোলনের কিংবদন্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

শোকাহত তথ্যমন্ত্রী প্রয়াতের আত্মার শান্তিকামনা করেন এবং তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.