আদালতে আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকের বিতণ্ডা, বিচার কাজ স্থগিত
একটি মামলার আবেদনের শুনানিতে বাদীর আইনজীবীর সঙ্গে বিতণ্ডার পর বিচার কাজ স্থগিত রেখেছেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকরা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর ) দুপুরে মহানগর হাকিম মো. অলি উল্লাহর আদালতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাকের সাথে এ ঘটনা ঘটে। তিনি বাদীর আইনজীবী হিসবে এদিন শুনানিতে অংশ নেন।
বাক-বিতণ্ডার পর হাকিম অলি উল্লাহ এজলাস থেকে নেমে ঘটনার বিষয়ে মুখ্য মহানগর হাকিমকে অবহিত করেন। কিছুক্ষণ পর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অধীন ১০ জন বিচারকের সবাই এজলাস ছেড়ে যান।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) এএএম হুমায়ন কবীর বলেন, একটি মামলার ফাইলিং এর বিষয়ে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের সাথে একজন বিচারকের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা আর কেউ চেয়ারে নেই।
ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ১৭ জুলাই মুরাদপুরের ঘটনায় আহত সোয়েব ইমরানের একটি মামলার আবেদন নিয়ে আমরা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে যাই। বাদীর পিঠে এখনো গুলির ক্ষত আছে। সব জানিয়ে মামলাটি যাতে থানায় এফআইআর হিসেবে নেওয়া হয়, সেই আদেশ চেয়েছিলাম। এরপর নিয়ম অনুসারে বাদী শপথ নিয়ে আদালতকে ১২-১৪ জন আসামির নাম বলেন। কিন্তু বিচারক বাদীর কাছে সকল আসামির নাম জানতে চান।
জেলা পিপি আশরাফ বলেন, তখন আমি বলি, এত নাম বলা সময়ের ব্যাপার। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। সব নাম তো আসামি বলতে পারবে না। এরপর আবারও আদেশ চাই।
এরপর বিচারক বলেন, আমার কাজ আমাকে করতে দেন। তারপর তিনি মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতাও জানাই। এসময় তিনি বলেন, আমার কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না। তখন আমি বলি, জোর কোথায় খাটালাম?
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ বলেন, এরপর এজলাস থেকে নেমে তিনি সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) মহোদয়ের কাছে গেছেন। তারপর সিএমএম আদালতের সব বিচারক নেমে গেছেন।
তিনি বলেন, উনার (ম্যাজিস্ট্রেট) বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা উনার আদালত বর্জন করলাম। সিএমএম মহোদয়কে দুদিন আগেও টেলিফোনে আমি জানিয়েছি, এই ম্যাজিস্ট্রেট মিসবিহেভ করেন। এই সপ্তাহর মধ্যে উনাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তা না হলে আমরা আদালত বর্জন করব।
বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর বিএনপি ও জামায়তপন্থি আইনজীবীরা চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় মহানগর হাকিম আদালতের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ স্লোগান দিতে থাকেন।
সবশেষ বেলা পৌনে ২টায় বিক্ষোভরত আইনজীবীরা মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলমের খাস কামরায় আলোচনার জন্য যান।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়া চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩টি পদে জয়ী হয়। ৫ অগাস্টের ছাত্র অভুত্থানের পর ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের আগের পিপি-এপিপিদের বাদ দিয়ে নতুন ৩৪৬ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তখনই জেলা পিপির দায়িত্ব পান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.