আজো থামেনি সড়ক দুর্ঘটনায় হারানো ৪৫ জনের স্বজনের কান্না

মিরসরাইয়ে ট্রমা সেন্টার স্থাপনের দাবি

৩০

এক যুগের বেশি সময় পাড় হলেও আজো থামেনি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৫ জনের স্বজনের কান্না। স্বজনের বুকফাটা আহজারীতে এখনো ভারী হয় আবু তোরাবের আকাশ-বাতাস। ২০১১ সালের ১১ জুলাই খেলা দেখে ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার পথে চালকের অসতর্কতার কারণে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে মারা যান তারা। চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সড়কে মৃত্যু থামছে না বলে দাবি স্বজনদের। এছাড়া এলাকায় দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে একটি ট্রমা সেন্টার স্থাপনের দাবি জানানো হয়।

বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম ও আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগএ ফুল দিয়ে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করে এ দাবি জানান স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন সমূহ। এসময় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেদিনে সেই ট্র্যাজেডি যখন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে, আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। আমার যদি এ অবস্থা হয়। তাহলে যাদের সন্তান হারিয়েছে সেই মা-বাবার অবস্থা কি হয় আল্লাহ জানেন। সেদিনে সেই ট্র্যাজেডির কথা মিরসরাইবাসী কোনোদিনই ভুলতে পারবে না। একসাথে এতগুলো শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, সন্তান পরিবারগুলোর বেঁচে থাকা সন্তানদের যদি সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটু প্রভাইড করা যেত তাহলে ওই পরিবারগুলো শান্তি পাবেন। এছাড়া ফেনী থেকে সীতাকুণ্ড এই হাইওয়ে এলাকার মাঝে মিরাসরাইয়ে এলাকায় দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবার দিতে পারার জন্য  একটি ট্রমা সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

১৩ বছর আগে ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত মিরসরাই আবু তোরাব স্কুলের সপ্তম শ্রেনির ছাত্র নুর মোহাম্মদ রাহাতের মা আহাজারি করে বলেন, অন্যদিনের মতো সেদিনও সকালে স্কুলে গিয়েছিলো রাহাত। বিকেলে বাড়ি ফেরে তার নিথর দেহ। সেই থেকে সন্তান হারানোর দিনটি এলে এভাবেই রাহাতের ছবি বুকে আগলে ধরে রাখি। একই অবস্থা পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন নয়নের স্বজনদের। চারবোনের পর সাখাওয়াত জন্মানোর পর তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন তার মা। কিন্তু সেদিনের ট্রাক দুর্ঘটনায় সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়।

নিহত অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আমিন শরীফের বাবা শাহজাহান বলেন, আমার ছেলে যখন মারা যায় আমি তখন বিদেশে ছিলাম। শেষ সময়ে ছেলেটাকে আমি দেখিনি। এর চেয়ে কষ্টের আমার কাছে আর কিছুই নেই।

২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা শেষে ফেরার সময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি পিকআপ বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় পাশের একটি ডোবায় উল্টে যায়। যেখানে উপজেলার আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদরাসার ২ জন, প্রফেসর কামালউদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেই ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী প্রাণে বেঁচে যান রেহান উদ্দিন শুভ, জুয়েল বড়ুয়া এবং নয়ন শীল। শত চেষ্টার পরও কিছুদিন পর তারাও মারা যান। যার ক্ষত আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.