চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চালু করা বিশেষ ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা আসছে। আগামী ২৫ জুন থেকে এ বিশেষ ট্রেন আর চলাচল করবে না বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে । রেল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের খবর পেয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ। তাঁরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর অন্দোলনের পাশাপাশি ঢাকা—কক্সবাজার ট্রেন চলাচল বন্ধ করাসহ রেল লাইনের উপর শত শত মানুষ শুয়ে প্রতিবাদ পালনের কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
রোববার (২৫ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলন থেকে এ হুশিয়ারি দেওয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলা হয়, “যেন রেল মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রেল চলাচলের স্থায়ী ব্যবস্থা করা হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা বলেন, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন। এ রেললাইনের কারণে বিশাল আকারে দেশকে সুদ দিতে হচ্ছে! রেললাইন যদি কোন আয় না করে তাহলে এ রেললাইন নির্মাণের দরকার কি ছিল! ২৫ জুন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচললরত টেন বন্ধের এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। না হয় সাংবাদিক সমাজকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাবো আমরা।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, বেশ কয়েকবার বন্ধ করার চেষ্টা করে না পেরে এখন মাদক যাতায়াতের টুনকো অজুহাতে আবারও এই ট্রেন বন্ধ করার পায়তার করছে। মূলত রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা পরিবহণ সেক্টরের সাথে যোগাযোগ করে পকেট ভারি করে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা এ সিদ্ধান্তের জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক। অন্যথায় চট্টগ্রামের সকল রেললাইন বন্ধ করে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন অবিলম্বে রেল মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে যাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রেল চলাচল চালু থাকে সে ব্যবস্থা করা হোক।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেন যাবেনা সেটি একদিনের জন্যও মানা যাবে না। প্রয়োজনে প্রেসক্লাব থেকে বিবৃতি দেয়া হবে। সব পেশার মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে যাবো। যদি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা নায় তাহলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কোন ট্রেন যেতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, এমপিদের কোন বক্তব্য পাচ্ছিনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজারের সচেতন নাগরিকের পক্ষথেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সরকারের কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম-ক্কসবাজার রেললাইনের দাবী করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় এ রেললাইন নিমার্ণ করা হয়েছে। রেল যোগাযোগ স্থাপনের কারণে সারাদেশের সাথে কক্সবাজারের বানিজ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। এরমধ্যে রেলওয়ের ভিতর-বাইরের কতিপয় ব্যবসায়ী কর্মকর্তারা পরিবহন সংস্থার যোগসাজসে এ ট্রেন বন্ধ করার পায়তারা করছে। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাবো আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরওয়ার কামাল, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.মাহফুজুর রহমান, প্রকৌশলী আশিক ইমরান, প্রফেসর ইদ্রিস আলী ও মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কেন্দ্রিয় সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ’র পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এদিকে ক্সবাজার রুটের স্পেশাল ট্রেনটির চলাচলের মেয়াদ আরও ২০ দিন বাড়িয়ে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত করতে চায় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১২ জুন এ রুটে পুনরায় স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়। আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত এ ট্রেন চলাচল করার কথা রয়েছে। তবে আরও ২০ দিন এ স্পেশাল ট্রেন চলাচলের জন্য রেলওয়ে সদর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছি। যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে স্পেশাল ট্রেনের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত তা মঞ্জুর হয়নি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.