বীরমুক্তিযোদ্ধা মির্জা আবু মনসুর আর নেই

৭৪

বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এমপিএ ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মির্জা আবু মনসুর আর নেই। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নলিল্লাহি…রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

মির্জা মনসুর দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে রেখে যান।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল নয়টায় নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে প্রথম জানাজা, দুপুর দুইটায় ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে দ্বিতীয় এবং বিকেল চারটায় নানুপুর আবু সোবহান উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মির্জা মনসুরের জন্ম ১৯৪৬ সালে ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মির্জা পরিবারে। তিনি শিল্পপতি মির্জা আবু আহমদ ও তৈয়বা বেগমের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপিএ নির্বাচিত হন।

মির্জা আবু মনসুর ছিলেন যুদ্ধকালীন এক নম্বর সেক্টরের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক কমান্ডের জোনাল কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর নির্দেশে দেশের যে ১৪ জন এমপিএ ও এমএনএকে তখন পূর্ণাঙ্গ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য বিহারের চাকুলিয়া সেনা প্রশিক্ষণ কলেজে পাঠানো হয়, মির্জা মনসুর ছিলেন তাঁদের একজন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে মেজর হিসেবে নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত কমিশন দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বীরযোদ্ধাকে ধরিয়ে দিতে পাকবাহিনী এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

এই কিংবদন্তি চট্টগ্রাম মিউনিপ্যাল হাইস্কুলে পড়ার সময় ১৯৫৯ সালে স্কুল ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। এ সময় ফেরদৌস আহমেদ কোরেশির হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তখন তাঁর সহকর্মী ছিলেন এমএ মান্নান, শায়েস্তা খান, কফিল উদ্দিন ও আশরাফ খান। তিনি ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে বিএসসি (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪-৬৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন।

মির্জা মনসুর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের সংগঠন যাত্রিকের সভাপতিও ছিলেন। ১৯৬৫ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বন্ধু আশরাফ খানসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সেই কারণে ফজলুল কাদের চৌধুরী তার পাসপোর্ট ইস্যু করতে দেননি। ফলে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ড যেতে পারেননি। অথচ ওই সময় তাঁর বাবা মির্জা আবু ছিলেন এমপিএ। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ৬৯ সালে ফটিকছড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি। ৭০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৬ বছর বয়সে এমপিএ নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে তিনি অ্যাডভোকেট এমএ ফয়েজকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক ছিলেন। আজীবন তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি, মির্জা আবু স্টিল ও মির্জা আবু অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মির্জা আবু মনসুর মৃত্যুতে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন ও সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব গভীর জানিয়েছেন। মির্জা আবু মনসুর ১৯৮৪-৮৫ মেয়াদে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.