চট্টগ্রাম–১৩: সরোয়ার জামালের মনোনয়ন বাতিলে উত্তাল আনোয়ারা–কর্ণফুলী; ফের মশাল মিছিল–বিক্ষোভ
দলের দুঃসময়ে ছিলেন বিদেশে, সুসময়ে এসে ভাগিয়ে নিলেন মনোনয়ন— ক্ষুব্ধ তৃণমূল
চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে বিএনপির প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী সরোয়ার জামাল নিজামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ফের মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
২৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) কর্ণফুলী উপজেলার বাদামতল এলাকায় অনুষ্ঠিত এই মশাল মিছিল ও বিক্ষোভে অংশ নেন শত শত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মী—যাদের অনেকেই স্বৈরশাসনামলে মামলা, হামলা ও জুলুম–নির্যাতনের শিকার ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, সরোয়ার জামাল একজন ‘সুবিধাবাদী’ ও আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, যার অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিএনপির মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের দাবি—দলের কঠিন সময়ে তিনি বিদেশে বিলাসী জীবনে থাকলেও এখন সুসময়ে এসে অর্থের প্রভাবে মনোনয়ন “ভাগিয়ে নিয়েছেন”। তৃণমূলের সঙ্গে তার কোনো দৃশ্যমান সম্পর্কও নেই বলে অভিযোগ ওঠে।
এক প্রতিবাদকারী নেতা বলেন, “ধানের শীষের তৃণমূল কখনোই সরোয়ার জামালকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেবে না। মনোনয়ন বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলন হবে।”
চট্টগ্রাম–১৩: অভ্যন্তরীণ সংকটের কেন্দ্রবিন্দু
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর অর্ধেক আসনেই বিস্তর অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দিয়েছে, যার অন্যতম চট্টগ্রাম–১৩। আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত।
সরোয়ার জামালের নাম ঘোষণার পর থেকেই আনোয়ারা–কর্ণফুলী এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তৃণমূলের দাবি—প্রার্থী হতে হবে দলের প্রতি বিশ্বস্ত, ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা। এই দাবিতে লায়ন হেলাল উদ্দিনের অনুসারীরা এক মাস ধরে রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন।
২১ নভেম্বর কাফনের কাপড় বেঁধে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়, যা চৌমুহনী মোড়ে সমাবেশে পরিণত হয়। বক্তারা সরোয়ার জামালকে “তৃণমূলবিচ্ছিন্ন” ও “দলের বিপর্যয়ের কারণ” আখ্যা দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এর আগে ১৩ নভেম্বর কালাবিবির দিঘীর মোড়ে আয়োজিত মশাল মিছিলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও ব্যানার–ফেস্টুনে আগুন দেন।
এক প্রবীণ বিএনপি নেতা বলেন, “৩০ বছরের রাজনীতিতে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের এমন ঐক্যবদ্ধ ক্ষোভ দেখিনি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা
সরোয়ার জামালের প্রার্থীতা বাতিলের দাবিতে ১৩ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস এবং কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া।
তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা—এই মনোনয়ন বহাল থাকলে দলভাঙা, ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংগঠনের ভেতরে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বিএনপির ভোটব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
এক জেলা নেতা বলেন, “এখনই ব্যবস্থা না নিলে নির্বাচনী মাঠ হাতছাড়া হবে। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চনা করলে দল আরও গভীর সংকটে পড়বে।”
মশাল মিছিলে স্লোগান ও উপস্থিতি
“চট্টগ্রাম–১৩ বয়কট”, “বিশ্বাসঘাতক সরোয়ার জামালের বিরুদ্ধে রিভিউ”, “আনোয়ারা–কর্ণফুলীতে বিশ্বাসঘাতকের ঠাঁই নেই”—এমন স্লোগানে মশাল মিছিলটি বাদামতল এলাকা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কর্ণফুলী উপজেলা চত্বরে শেষ হয়।
এসময় প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। মিছিলে অংশ নেন বিএনপি নেতা কামরুল, সায়েম, মোরশেদ, সাকিব, ইউচুপ, আবির, সাইমন, ফয়সাল, আমিন, ফোরকান, মহিউদ্দিন, আলমগীর, টিপুসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.