বিশ্ব স্ট্রোক দিবস: প্রতি ৪জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১জন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে : মেয়র ডা. শাহাদাত
চট্টগ্রাম, ২৭ অক্টোবর:
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “স্ট্রোক এখন বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ। প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। অথচ এর বেশিরভাগ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সচেতন হয়ে সময়মতো চিকিৎসা নিলে স্ট্রোক থেকে বাঁচা সম্ভব।”
তিনি সোমবার (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) প্রাঙ্গণে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন হয় সাইকেল র্যালির মাধ্যমে। সকাল ৯টায় চমেক ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া র্যালিটি হাসপাতালের মূল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় সাইকেল ফেস্ট, ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টসহ নানা ক্রীড়া আয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, “অনেকে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোককে এক মনে করেন—এটা ভুল ধারণা। হার্ট অ্যাটাক হয় হৃদপিণ্ডে, আর স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে। মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া বা কথা জড়ানো—এসবই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ। এমন হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়মিত ব্যায়াম, লবণ ও তেল-চর্বি সীমিত করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিরোধই চিকিৎসার আগে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার অর্ধেক সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ী অক্ষমতায় ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও স্থূলতা এখনো প্রধান ঝুঁকি।”
তিনি জানান, “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন স্ট্রোক চিকিৎসায় ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবা চালু করেছে।”
নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মো. সাইফুল আলম বলেন, “স্ট্রোকের ৮০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা, ধূমপান বন্ধ করা, লবণ-তেল কম খাওয়া ও প্রতিদিন হাঁটা—এই অভ্যাসগুলো জীবন বাঁচাতে পারে।”
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, “স্ট্রোক প্রতিরোধ মানেই জীবন বাঁচানো। ঝুঁকি প্রতিদিন তৈরি হয়, তাই সচেতনতা জরুরি।”
দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় কলেজ অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সামসুল আলম সবুজ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.