চবির সাবেক ভিসিদের কাউকে প্রিমিয়ারের দায়িত্ব দিতে চান মেয়র শাহাদাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন এমন কাউকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিতে চান বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যাদের চিন্তা-ভাবনা করছি তারা অনেক দক্ষ ও বিজ্ঞ। আমরা ওই ধরণের লোক চাই, যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। আমরা চাই না এমন কাউকে দায়িত্ব দিতে চাই, যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হোক। কোনো পরিবারতন্ত্র -মাফিয়াতন্ত্রের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধক দেয়া যাবে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর টাইগারপাসের চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুদ পরিস্থিতি নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখানে এমন রুলস করা হবে কোনো সিটি করপোশেনের মেয়র এ বিশ্ববিদ্যালয় নিজের সম্পত্তি হিসেবে দখল করতে না পারে। এটা আমি কমিন্টমেন্ট করছি। এ ধরণের একটি আইন করা হবে, যাতে এটাকে পরে কেউ নিজের সম্পত্তি করতে না পারে। অতীতে যেটা হয়েছিল। মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘গত দুই তিনদিন আগে উদ্ভুদ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভিসি- প্রোভিসি ও রেজিষ্ট্রার পদত্যাগ করেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়ালেখা করে। এটা নিয়ে অনেক অভিভাবক উৎকন্ঠায় ছিলেন। অনেকেই আমার কাছে এসেছিলেন, আমার বাসায়ও গিয়েছিলেন। আমি তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বলেছিলাম এটা সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি। তাই এটা সিটি করপোরেশন দেখবে।

‘গত ১৬ বছর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চসিক এটা সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে। ২০০২ সালে সমস্ত আইন মেনে সিটি করপোরেশন ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে জায়গা কিনে এ বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে গত ১৬ বছর সেটা পরিচালিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,  এ বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব, নিজের টাকায় কেনা সেহেতু এটা পরিচালনা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিতে চিঠি প্রেরণ করেছি। সর্বশেষ আপডেট হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পক্ষে রায় এসেছে। কোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞা যেহেতু ছিল সেটার জন্য উনারা একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়েছেন। সবকিছু সিটি করপোরেশনের পক্ষেই আছে।’

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ফিরে পাওয়া সময়ের ব্যাপার উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ন্যায্য যে হিস্যা আমাদের সম্পত্তি, যেটা মাফিয়াচক্র দখল করেছিল সেটা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা ফিরে পাব। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। যারা এতদিন ধরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। তারা অনেকদিন ধরে নিষ্পেষিত ছিল। অনেক শিক্ষক প্রমোশন পাইনি। অনেক ছাত্র নিগৃহীত ছিল। একপর্যায়ে গিয়ে ভিসি-প্রোভিসি পদত্যাগ করেছে। যারা আন্দোলন করেছে তাদের সাধুবাদ জানাই।’

‘কিন্তু আমি এটাও বলছি সবকিছু নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। আমরা যদি কোনো অনিয়ম করতে চাই, মাফিয়া চক্রের হাতে পড়ে যাই তাহলে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা বিফল হয়ে যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যতক্ষণ আমাদের বুঝিয়ে দেবে না যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি তখন পর্যন্ত আমরা ধৈর্‍্য্য ধরে থাকব। এরপর চিঠি পেলে আমরা আমাদের সম্পত্তি বুঝে পেয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করব।’

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এতদিন যারা দখল করে রেখেছিল তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা তো অবশ্যই। মন্ত্রণালয় থেকে যদি আদেশটি চলে আসে তারপর আমরা দেখব। ছয়-সাত বছর ধরে যেটা করেছে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘মেয়র হজ্জ কাফেলা, বিজয় টিভিসহ যেসব সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি ছিল সবগুলোই আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় মাধ্যেমে নেব। জোর করার পক্ষে আমি না। আমি আইনি প্রক্রিয়ায় চলতে চাই। দায়িত্বশীল জায়গায় এসে যদি আমি আইনভঙ্গ করি সাধারণ মানুষও আইন ভঙ্গ করবে।’

এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও সচিব আশরাফুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

 গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, উপ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা এবং কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদ পদত্যাগ করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.