চাঁদে অবতরণের জন্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তার নতুন মহাকাশ যান স্পেস লঞ্চ সিস্টেমের যাত্রা শুরুর সময় গণনা করছে। সোমবার স্থানীয় সময় সকাল আটটা ৩৩ (বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩) মিনিটে রকেটটি উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসএলএস নাসার তৈরি এ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশ যান। চাঁদে মানবজাতির অবতরণের পঞ্চাশ বছর পর আবার মানুষকে চন্দ্রপৃষ্ঠে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই প্রকল্পটির নাম আর্টেমিস। নাসার কর্মকর্তারা মনে করছেন, এতে মূল প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটি নেই।
এই রকেট একটি ক্যাপসুল বহন করবে। এই ক্যাপসুলের নাম ওরাইয়ন; যা চাঁদের চারপাশে পরিভ্রমণ করবে।
তবে এই যাত্রায় কোনও মানুষ থাকবে না। যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলে পরবর্তী মিশনগুলোতে মহাকাশচারীরা যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এই এসএলএসটি উৎক্ষেপণ করা হবে।
যাত্রা শুরুর পর যানটি দু’ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ত্যাগ করবে। নাসার এক্সপ্লোরেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্টের সহযোগী প্রশাসক জিম ফ্রি বলছেন, পর্যালোচনা থেকে আমরা কোনও নেতিবাচক ফলাফল পাইনি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনও ভিন্নমতও তৈরি হয়নি।
চাঁদে মানুষ প্রথমবারের মতো পা রাখে ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ রকেটে চড়ে। ওই ঘটনার অর্ধ-শতাব্দী পরের এই উৎক্ষেপণ নাসার জন্য একটি বড় ঘটনা হতে যাচ্ছে।
নাসা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা তাদের নতুন প্রযুক্তি আর্টেমিস প্রোগ্রাম নিয়ে ফিরে আসছে; যার প্রযুক্তি আধুনিক যুগকে সমৃদ্ধশালী করবে। এই চন্দ্রাভিযানকে নাসা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার একটা প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে।
তারা আশা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বা তার পরপরই তারা মহাকাশচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠাবে।
‘আপনি জানেন এখন পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ অন্য আরেকটি গ্রহে কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে সেই দৃশ্য দেখেননি। তাই অনেক অর্থেই এটা তাদের জন্য প্রথমবারের মত চাঁদের বুকে ভ্রমণ হবে,’ বলেছেন কেথ কাউয়িং। তিনি দ্য নাসা ওয়াচ নামে ওয়েবসাইটের সম্পাদক যেটা নাসার খবর প্রকাশ করে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, আমরা ভিন্নভাবে করি, সবকিছুই তাৎক্ষণিক। কিন্তু এবার সবকিছুই হবে হাই ডেফিনেশন… এবং তাতে থাকবে শব্দ। কিন্তু দিন শেষে দেখা যাবে মানুষ ভিন্ন একটা গ্রহে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আশা করছি এবার হয়ত এটা একটা বৈশ্বিক প্রচেষ্টা হবে। এটা এমন হবে না যে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে।
এসএলএস এবং ওরাইয়ন তৈরি করা হয়েছে এক দশক ধরে। এই পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রতিটির খরচ পড়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। ওরাইয়নকে এর আগে ২০১৪ সালে মাত্র একবারের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কাছাকাছি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু তখন আগে থেকে তৈরি থাকা একটা বাণিজ্যিক রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল।
আর এবার যে ফ্লাইটটি যাবে তাতে প্রথমবারের মতো আর্টেমিস এক্সপ্লোরেশন হার্ডওয়্যারটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষিত হবে। এসএলএস এবং ওরিয়ন কেনেডি স্পেস সেন্টারের উৎক্ষেপণ প্যাডে গত সপ্তাহে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত কর্মকর্তারা তারপর থেকে জ্বালানি, বৈদ্যুতিক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযোগ করেছেন, যাতে কাউন্ট ডাউনের জন্য প্রস্তুত থাকা যায়।
ওরাইয়নকে চাঁদ এবং একে ছাড়িয়ে মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে ৪২দিনের জন্য। আশা করা হচ্ছে, এটি পৃথিবীতে ফিরে আসবে ১০ অক্টোবর।
ক্যালিফোর্নিয়া স্যানডিয়েগোর কাছে প্রশান্ত মহাগরে অবতরণ করবে। আর্টেমিস-২-এ প্রথম মনুষ্যবাহী মিশন পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২০২৪ সালে। আর আর্টেমিস-৩ ২০২৫ সালের আগে চাঁদে যাবে না।
এসব মহাকাশযাত্রার জন্য নাসা এখনো কোনও মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করেনি। কিন্তু কয়েক দিন আগে তারা চন্দ্রপৃষ্ঠের একটা স্থানের ছবি প্রকাশ করেছে যেখানে ভবিষ্যৎ ক্রুদের পাঠানো হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।