দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। করোনার এই ধরনটি ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মিউটেশন ঘটিয়েছে। এছাড়া নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হতে পারে, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে।
তবে নতুন প্রজাতির ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। যুক্তরাজ্য বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ভাইরাসের নতুন রূপ নিয়ে তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। এছাড়া বিদ্যমান করোনা টিকা ভাইরাসের এই ধরনকে কতটা থামাতে পারবে সেটি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ডয়চে ভেলে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার একটি নতুন ধরনের খোঁজ মিলেছে। যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছে, করোনার বি.১.১.৫২৯ নামক এই ভ্যারিয়েন্টে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন। করোনার এই ধরনে সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সবাই দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ের বাসিন্দা।
একজন বিশেষজ্ঞ করোনার বি.১.১.৫২৯ নামক এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি করোনার এই ধরন মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এজেন্সি জানিয়েছে, এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসের মধ্যে যে স্পাইক প্রোটিন আছে, তা অন্য করোনাভাইরাসের থেকে একেবারেই আলাদা। তাদের দাবি, আজ পর্যন্ত যত ধরনের করোনাভাইরাস এসেছে, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ্যারিয়েন্ট। এই ভাইরাস কতটা ভয়ংকর, এটি রুখতে ভ্যাকসিন কাজ করবে কি না, কতটা দ্রুত তা ছড়ায় সবই গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখছেন।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্ট আরও দ্রুত ছড়ায়। আর এখন যে ভ্যাকসিন চালু আছে, তা এর বিরুদ্ধে খুব বেশি কার্যকর হবে না।
যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানাসহ মোট ছয়টি দেশে যাতায়াতের ওপর কড়াকড়ি চালু করেছে। এছাড়া এসব দেশ থেকে যুক্তরাজ্যমুখী ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। অবশ্য যুক্তরাজ্যে এখনও ভাইরাসের এই ধরনে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি।
সাজিদ জাভিদ বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে বিজ্ঞানীরা ‘গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন’। তবে এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ রুখতে সতর্কতার অংশ হিসেবে এই ৬টি দেশকে রেড লিস্টে রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে শুক্রবার বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেখানে বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হবে এবং এর একটি নামও দেওয়া হবে।
এছাড়া নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাস নিয়ে ভারতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে আরও কড়াকড়ি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার আশপাশের দেশ থেকে যারা আসছেন, তাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করার কথা বলা হয়েছে।