৩৮ স্ত্রী ৮৯ সন্তান ৩৩ নাতি-নাতনি রেখে পরপারে জিওনা

৩৮ স্ত্রী, ৮৯ সন্তান ও ৩৩ নাতি-নাতনি নিয়ে গঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের প্রধান ভারতের মিজোরামের বাসিন্দা জিওনা চানা ৭৬ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। জিওনার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা।

জোরামথাঙ্গা টুইটারে লেখেন, ‌‘ওই পরিবারের কারণে মিজোরাম ও তার গ্রাম বাকতাওং তালাংনুয়াম গোটা রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গভীর শোকের সঙ্গে মিজোরাম জিওনা চানাকে শেষ বিদায় জানাবে। শ্রদ্ধা।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় মিজোরামের ত্রিনীতি নামক হাসপাতালে জিওনা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিল তার।

১৯৪৫ সালের ২১ জুলাই তার জন্ম। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম স্ত্রী তার চেয়ে তিন বছরের বড়। জিওনার বয়স যখন ১৭ তখন তিনি তাকে বিয়ে করেন। এরপর একে একে তিনি ৩৮ জনকে বিয়ে করেছেন। তাদের সন্তানের সংখ্যা ৮৯ জন।

মিজোরামের পাহাড়ি এলাকায় চার তলা একটি বাড়িতে সর্ববৃহৎ ওই পরিবারের বাস। ‌‘ছুয়ান থার রুন’ বা ‘নতুন প্রজন্মের বাড়ি’ নামে ওই বাড়িতে রয়েছে শতাধিক কক্ষ। তবে গোটা বাড়ি মিলে রান্না করার ঘর একটি। সেখানেই পুরো পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা হয়।

রয়টার্স জানাচ্ছে, একই ভবনের পৃথক পৃথক কক্ষে জিওনা চানার সন্তানরা, তাদের স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের বাস। অপরদিকে বাড়িটির একটি গণরুমে বাস করেন তার স্ত্রীরা। স্ত্রীদের ঘরের সঙ্গে লাগোয়া ঘরটিতে থাকতেন জিওন চানা। সেটাই তার ব্যক্তিগত শয়নকক্ষ।

সব মিলিয়ে পরিবারটির সদস্য সংখ্যা ১৮১ জন। নিজের সন্তান ছাড়া চানার রয়েছে ১৪ পুত্রবধূ। জিওনা চানা অবশ্য নিজেকে ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান বলে দাবি করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও তার অনুসারীর দেওয়া অর্থ দিয়েই চলতো বিশাল এই পরিবার।

এর আগে ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিওনা বলেন, ‘ঈশ্বরই আমাকে এত বড় পরিবার দেখার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ৩৯ রমণীর স্বামী ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরিবারের প্রধান হওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

চানার পরিবার সামরিক বাহিনীর মতো কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলে। বড় স্ত্রী জাথিয়াঙ্গি বাড়ির ধোয়ামোছা, রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সব কাজ তদারকি করেন। এক সন্ধ্যার ভোজে তাদের লাগে ৩৩টি মুরগি, ১৩২ পাউন্ড আলু ও ২২০ পাউন্ড চাল। বিশাল এক আয়োজন।

জিওনা চানা এক বছরে ১০ বিয়ে করার নজিরও গড়েছেন। বেশ আমোদ ও ফুর্তিবাজ তিনি। বিরাট শয়নকক্ষে নিজস্ব ডাবল সাইজের বিছানায় তিনি পছন্দসই স্ত্রীদের নিয়ে রাতযাপন করেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তিনি রোটেশন করে স্ত্রী সহবাসের প্রথা বজায় রেখেছেন।

চানার স্ত্রীর একজন রিংক মিনি জানান, বাড়িতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন চানা। তারা সবাই তাকেই ঘিরে রাখেন। গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শনও তিনি। ১৮ বছর আগে একদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে তাকে দেখে পত্র দিয়ে বিয়ে করার আগ্রহ জানিয়েছিলেন চানা।

চানার প্রথম স্ত্রী যাথিয়াঙ্গির তৈরি করা কর্মতালিকা রয়েছে। গৃহস্থালির কাজ সামলানোর ক্ষেত্রে তার ওই তালিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। আদিবাসী খৃস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান জিয়োনা চানার পরিবার একটু ভিন্নভাবেই ধর্ম পালন করে।

১৯৩০ সালের শুরুর দিকে জিয়োনার বাবা চালিয়েন চানা চানা সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তার ধারক-বাহক এই চানা পরিবার। এলাকায় তাদের অনুসারী রয়েছে অসংখ্য। আর এ কারণেই তাদের পরিবারটিকে গ্রামের নেতা হিসেবে সব নির্দেশ মেনে চলা হয়।

পরপারে জিওনা