চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদে এবং সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)-এর উদ্যোগে শনিবার বিকেল ৩টায় লালদিঘী মাঠ চত্বরে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিইউসি কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস একজন মার্কিন লবির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। তিনি নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের বিশেষ সম্পর্কের কারণে। এখন তিনি ক্ষমতায় বসে মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন, যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী।”
তিনি আরও বলেন, “আমেরিকা ও ইউরোপের বর্তমান উন্নয়ন মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার সম্পদ লুণ্ঠনের ফল। তাই তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের মঙ্গল সাধন সম্ভব নয়।”
সরকারের বৈধতা প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়; বিশেষ কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় গঠিত। তাই তাদের কোনো সিদ্ধান্তই প্রকৃত অর্থে গণমুখী নয়।”
টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। এই বন্দর নিয়ে কোনো প্রকার ছিনিমিনি খেলা সহ্য করা হবে না। ডক শ্রমিক, সিএন্ডএফ শ্রমিকসহ দেশের শ্রমজীবী মানুষের হাতেই বন্দর পরিচালনা হবে—বিদেশিদের হাতে নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত সরকারের সময় নেয়া একতরফা ইজারা সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহাল রেখেছে—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার এই চক্রান্ত জনগণ কখনো মেনে নেবে না। সরকারকে অবিলম্বে এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে; অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির মাধ্যমে বন্দরসহ সারা বাংলাদেশ অচল করে দেয়া হবে।”
এ সময় তিনি আগামী ১৫ নভেম্বর নয়াবাজার থেকে বড়পুল পর্যন্ত মশাল মিছিলের কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম, বন্দর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খোকন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের খোরশেদুল আলম, জাহেদ উদ্দিন শাহিন, বিএফটিইউসি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক হুনি, বিএমএসএফ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, “চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাম্প্রতিক গণবিজ্ঞপ্তিতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। ভবিষ্যতে নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করা হলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।”
বক্তারা সর্বসম্মতভাবে দাবি জানান—চট্টগ্রাম বন্দর ও লালদিয়ার চর জাতীয় সম্পদ, যা কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা বহুজাতিক কোম্পানির কাছে ইজারা দেয়া যাবে না। তারা ঘোষণা দেন, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে স্কপসহ সকল শ্রমিক সংগঠন বৃহত্তর ঐক্য গড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।