রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে মিশে আছে মেসির চোখের জল। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ বাঁশির পর প্রথমে আকাশের দিকে তাকিয়ে হতাশা প্রকাশের পর দুই হাঁটুতে হাত রেখে ঘাসের বুকে অশ্রু ছাড়ার দৃশ্যটা স্মরণ করে এখনো আফসোসে পোড়ে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। নেইমারদের তো আরও আগেই ছুটি হয়েছিল সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭ গোল খেয়ে।
নেইমারের আনন্দ-উল্লাসের সাক্ষীও হয়ে আছে বিশ্ব ফুটবলের ঐতিহাসিক এ ভেন্যুটি। বিশ্বকাপ থেকে লজ্জাজনকভাবে বিদায়ের দুই বছর পর অলিম্পিক ফুটবলের স্বর্ণ এই মারাকানা স্টেডিয়ামেই জিতেছিল ব্রাজিল। ২০১৬ রিও অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে জার্মানিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সোনার হরিণ হয়ে যাওয়া অলিম্পিক ফুটবলের স্বর্ণমালা পরেছিলেন নেইমাররা। ফাইনালের জয়ের নায়ক ছিলেন নেইমারই। ম্যাচে গোল করেছিলেন, টাইব্রেকারেও করেছিলেন জয়সূচক গোলটি।
ঘরের বিশ্বকাপে মারাকানা স্টেডিয়ামে কোনো ম্যাচই খেলা হয়নি ব্রাজিলের। ফাইনালে উঠলে সেখানে তাদের খেলা হতো প্রথম ম্যাচ। ওই ফাইনালের আগে ব্রাজিলের পুরোনো রাজধানী শহরটি যেন ব্রাজিলের ছিল না, ছিল মেসি সমর্থকদের দখলে।
সাত বছর আগে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ঘিরে রিও শহরের উম্মাদনা কাছ থেকে দেখেছি। ২৪ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা এবং চিরশত্রু ব্রাজিলের সেমি থেকে বিদায় নেয়া- আর্জেন্টিনার সমর্থকদের পূর্ণ হয়েছিল খুশির ষোলকলা। কিন্তু শেষ হাসি তারা মারাকানায় হাসতে পারেনি। প্রথম দল হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরে জার্মানরা।
কোপার ফাইনাল উপলক্ষে রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়াম ঘিরে নিশ্চয়ই মিলনমেলা চলছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের! হয়তো এবার আর মেসি বা নেইমারের সমর্থকদের একক প্রাধান্য নেই, যেমন ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে ছিল মেসিদের এবং ২০১৬ অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে ছিল নেইমারদের। এ সময়ের বিশ্বসেরা দুই তারকা ফুটবলার মেসি ও নেইমারের মহারণও দেখা যাবে কোপার ফাইনালে।
রিও ডি জেনিরোর মারাকানা মেট্রো স্টেশন থেকে স্টেডিয়ামে মেলানো ফুটওভার ব্রিজটি ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ উপলক্ষে সাজানো হয়েছিল মনোরমভাবে। রিও ডি জেনিরোবাসীর বাড়তি বিনোদনের জায়গা স্টেশন আর স্টেডিয়ামের সংযোগ ব্রিজটি, যা ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগের দুদিন ছিল শুধুই আর্জেন্টাইনদের দখলে।
এখনও চোখে ভাসছে ফাইনালের আগের দিনের মারাকানা স্টেডিয়ামের আশপাশের সেই দৃশ্য। গিজগিজ করছিল মানুষ। এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে দল বেঁধে ছবি তোলা, হৈ-হুল্লোড় করা। ফাইনালে ব্রাজিল ছিল না, নেইমার সমর্থকদের গায়ে জ্বালা ধরাতে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কণ্ঠে ছিল উচ্চস্বরের গান ‘ওলে ওলে আর্জেন্টিনা’।
কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফাইনাল অহরহ হলেও এখনো বিশ্বকাপ দুই দেশকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেনি ফাইনালে। ২০১৪ বিশ্বকাপে সেই সম্ভাবনা ছিল উজ্জ্বল। আর্জেন্টিনা উঠলেও পারেনি ব্রাজিল। তাইতো বিশ্বকাপের দেখাও হয়নি মেসি নেইমারের।
মারাকানায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে কোপার ফাইনাল ঘিরে যে উম্মাদনা বিশ্বব্যাপী তার বেশিরভাগের কেন্দ্রেই মেসি-নেইমার। মেসির শেষ কোপা। শেষের ভালো হবে কি ধরার এই সেরা ফুটবলারের? তার হাতে উঠবে কি আন্তর্জাতিক ট্রফি? কোপায় সফল এক দল আর্জেন্টিনা। তারপরও মেসির আক্ষেপের জায়গা অনেক। তার যে সাফল্য নেই দেশের জার্সিতে। সেই অপেক্ষায়ই আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।
রিও ডি জেনিরোর ফাইনালের উত্তেজনা এখন পুরো বিশ্বে। বাংলাদেশে মনে হয় একটু বেশি-ই। অন্য কোথাও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ না হলেও বাংলাদেশে হয়। মেসি ও নেইমারে মাতোয়ারা মানুষ এখন প্রিয় দলের বিজয় দেখে শেষ হাসির অপেক্ষায়। নেইমার কি পারবেন কোপার শিরোপা ধরে রাখতে? নাকি মেসি প্রথম ট্রফির স্বাদ পাবেন তার শেষ কোপাতেই?
২০১৪ বিশ্বকাপের মারাকানা কাঁদিয়েছিল মেসিকে। ২০১৬ অলিম্পিক ফুটবলে মারাকানা হাসিয়েছিল নেইমারকে। এবার কার হাসার বা কার কাঁদার পালা? সব রহস্য লুকিয়ে সেই মারাকানায়। ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামই জানে কার হাতে ট্রফি তুলে দিতে মঞ্চ তৈরি করে আছে সে।