সিরিজের আগে ভাবাও যায়নি এমনটা। কখনও যাদের বিরুদ্ধে টি টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি টাইগাররা, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছাড়া সেই অস্ট্রেলিয়াকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে নাস্তানাবুদ করল বাংলাদেশ।
হিসাবি বোলিংয়ে ম্যাচের প্রথম ভাগেই অর্ধেক কাজটা সেরে রেখেছিলেন মুস্তাফিজ, শরিফুল, সাকিব, মেহেদী হাসানরা। আগের ম্যাচের বিস্ময় বালক নাসুম আহমেদ আজ আলো ছড়াতে না পারলেও সফরকারীদের আটকে রাখা গেছে ১২১ রানেই।
জবাবে শুরুতেই ব্যক্তিগত শূন্য ও দলীয় ৯ রানে সৌম্য এবং দলীয় ২১ রানে নাঈমের বিদায় চাপে পরিণত হতে দেননি সাকিব আল হাসান।
টানা তিন চার মেরে বড় কিছুর ইঙ্গিত দেয়া বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার যখন ক্রিজে ছিলেন, তখন ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার দশা সফরকারীদের।
৫৮ রানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মুখের বিদায়ের পর ছোটখাটো একটি ঝড় বয়ে যায়। রানের চাকা চালু না করেই ফিরে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। আর যার ওপর ভরসা ছিল, সেই মেহেদী হাসানও ফিরে আসেন ২৩ রান করে।
তখন দলীয় রান ৬৭। আরও দরকার ৫৫ রান। উইকেটে অনভিজ্ঞরা। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান আর আফিফ হোসেন অবলীলায় জিতে গেলেন এই চ্যালেঞ্জে। বাংলাদেশের তরুণদের শক্তি দেখল অস্ট্রেলিয়া।
৩৭ রানে আফিফ ও ২২ রানে সোহান অপরাজিত থেকে ৫ উইকেটের এক দুর্দান্ত জয় উপহার দেন বাংলাদেশকে।
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ২-০তে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে টাইগার বাহিনী।
প্রথম ম্যাচে সফরকারীরা হেরেছিল পরে ব্যাট করে। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর পর ১৩১ রান তুলতে পারে স্বাগতিকরা। ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো হাঁসফাঁস করতে থাকে।
আপাত সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা মুখ থুবড়ে পড়ে ১০৮ রানে।
সেই স্মৃতি আর ফিরিয়ে আনতে চাননি বলে অজি অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড এবার টস জিতে নিলেন ব্যাট। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি ওপেনাররা।
তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৩ রানেই সফরকারীদের শিবিরে আঘাত হানেন মেহেদী হাসান। সাজঘরে ফেরান ওপেনার অ্যালেক্স ক্যারিকে।
এরপর অজি শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওপেনার জশ ফিলিপেকে থামিয়ে দেন মাত্র ১০ রানেই।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস মেরামতের গুরুভার কাঁধে তুলে নেন মিচেল মার্শ। সঙ্গে নেন মোয়েজেস এনরিকেসকে। দুইজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া।
তাতে বাধা দেন সাকিব আল হাসান। দলীয় ৮৮ রানে ব্যক্তিগত ৩০ রানে এনরিকেসকে ফিরিয়ে আনেন ব্রেক থ্রু। এরপর নামে ধস।
উইকেট কামড়ে ধরে বসেছিলেন মার্শ। এগিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু তার সেই স্বপ্নভঙ্গ হয় শরিফুলের কারণে। ব্যক্তিগত ৪৫ ও দলীয় ৯৯ রানে বাংলাদেশের তরুণ এই পেইসারের প্রথম শিকার বনে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মার্শ।
পরে টাইগার বোলারদের তোপের সামনে দাঁড়াতে পারেননি কোনো অজিই। শেষতক ৭ উইকেট খরচায় ১২১ রানে থামে সফরকারীদের চাকা।
শুরুতে চাপ, পরে তা উড়িয়ে দিয়ে ছুটে চলার মধ্যে হঠাৎ ছন্দপতন। এরপর দুই তরুণের ডরভয়হীন ক্রিকেটে ইতিহাসের প্রথমবারের মতো যে কোনো ফরম্যাটে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজে আন্ডারডগ বানিয়ে দিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১২১/৭ (ফিলিপে ১০, ক্যারি ১১, মার্শ ৪৫, হেনরিকেস ৩০, ওয়েড ৪, টার্নার ৩, অ্যাগার ০, স্টার্ক ১৩*, টাই ৩*; মেহেদি ১/১২, সাকিব ১/২২, মুস্তাফিজ ৩/২৩, শরিফুল ২/২৭)
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১২৩/৫ (নাঈম ৯, সৌম্য ০, সাকিব ২৬, মেহেদি ২৩, মাহমুদউল্লাহ ০, আফিফ ৩৭*, সোহান ২২*; স্টার্ক ১/২৮, হেইজেলউড ১/২১, অ্যাগার ১/১৭, জ্যাম্পা ১/২৪, টাই ১/২৭)
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : আফিফ হোসেন
সিরিজ : ৫ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।