বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেছেন, চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস লিমিটেডের উৎপাদিত পাটপণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাটখাত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) মিলগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়া এসব মিলে নতুন করে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস লিমিটেডের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন কালে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস লিমিটেড ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেওয়া হয়। কেএফডি জুট মিলটি বর্তমানে ৬০০ শ্রমিকের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ১০টন পাটপণ্য উৎপাদন করছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এ পর্যন্ত ১৩০ টন পাটজাতপণ্য ভিয়েতনাম, তিউনিশিয়া ও চীনে রপ্তানি করছে।
এছাড়াও প্রায় ৬০০ টন পাটপণ্যের অর্ডার শিপমেন্টের অপেক্ষায় আছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আরও দুটি উৎপাদন ইউনিট আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করতে যাচ্ছে। ফলে প্রচলিত ও বহুমুখী পাটপণ্য মিলে দৈনিক গড়ে ১০০ টন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আশা করছি, এখানে ৩ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেওয়া হয়েছে। মিলটিতে ইতোমধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস ও চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিলস লিজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও ১৩টি জুটমিলের জন্য ২য় ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ১৮টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে ৫৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রস্তাবসমূহ দ্রুত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশা করছি, এ পর্যায়ে আরও কয়েকটি মিল ভাড়াভিত্তিক লিজ দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে, একদিকে যেমন পাটপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে এসব পণ্য রপ্তানি করে আয় বৃদ্ধি পাবে। নতুন করে এসব মিলগুলোতে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং এ ক্ষেত্রে অবসানকৃত শ্রমিকরা অগ্রাধিকার পাবেন।
উল্লেখ্য, সরকারি সিদ্ধান্তে পাটকলসমূহের বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান ও পাটখাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ১ জুলাই ২০২০ তারিখ হতে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি জুট মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, ২৫টি জুট মিলের সব স্থায়ী শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ সমুদয় পাওনা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
এছাড়াও, যাচাইকৃত বদলি শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মামলা নিষ্পত্তি বা প্রত্যাহারজনিত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা, অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা এবং মিল চলাকালীন সময়ের ৬৪ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি বাবদ ৯২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা, কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা এবং স্টোর সরবরাহকারী বা সংশ্লিষ্ট ক্যারিং সরবরাহকারীদের পাওনাসহ মোট ৫৭৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
পরিদর্শনকালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বস্ত্র ও পাট সচিব মো. আব্দুর রউফসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।