২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নিম্নস্তরে মূল্য বিভাজন সংক্রান্ত পদক্ষেপ অনুযায়ী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সিগারেটের প্রতি শলাকায় দামে ন্যূনতম ১ টাকা পার্থক্য করে প্রতি ১০ শলাকার মূল্য দেশীয় সিগারেট ৩৯ টাকা এবং আন্তর্জাতিক সিগারেট ৪৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে দেশীয় সিগারেট উৎপাদনকারী মালিক সংগঠন।
রবিবার (২০ মার্চ) চট্টগ্রাম চেম্বারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এর সাথে ব্যাবসায়ীদের প্রাক বাজেট বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সিগারেট উৎপাদনকারী মালিক সমিতির প্রতিনিধি আবদুল আউয়াল মোহন এই প্রস্তাব দেন। সেই সাথে তিনি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী বর্তমানে বাজারে নিম্নস্তরে বিদেশী কোম্পানীর বাজারজাকৃত আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যস্তরে উন্নীত করে নিম্নস্তর শুধু মাত্র দেশীয় কোম্পানীর সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবী জানান। উক্ত দুই প্রস্তাবনার যে কোন একটি বাস্তবায়ন হলে সিগারেট খাতে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপশি সরকারের রাজস্ব আদায় বর্তমান বছরের তুলনায় ২২ থেকে ৩৮শতাংশ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এইখাতে সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিত এবং দেশীয় শিল্পসমূহকে বাঁচিয়ে রাখতে আবদুল আউয়াল মোহন বলেন, বর্তমানে এদেশের অনেক বৃহৎ ও নামকরা শিল্পগোষ্ঠীর উত্থান তামাক ব্যবসার মাধ্যমে। এবং সিগারেট খাত এই তামাক ব্যবসার একটি অংশ। সিগারেট খাতে ২০০৩ পূর্ববর্তী সময়ে অরাজক ও বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান ছিল। তখন এই খাতে শৃঙ্খলা আনার জন্য ২০০৩ সালে স্ল্যাব প্রথা প্রবর্তন করা হয় এবং নিন্মস্থর দেশীয় কোম্পানীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সে সময় নিম্নস্ল্যাবে দেশীয় কোম্পানীর বাজার হিস্যা ছিল ১০০%। একমাত্র বিদেশী কোম্পানী যারা মধ্যম থেকে উচ্চস্তরে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করতো। কিন্তু ২০০৮-০৯ সাল থেকে উক্ত বিদেশী কোম্পানী নিম্নস্তরের বাজারে আন্তর্জাতিক নামী-দামী ব্র্যান্ডসমূহ এনে উৎপাদন ও বাজারজাত করতে থাকে। যার ফলে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় কোম্পানী সমূহ ক্রমান্বয়ে বাজার হারাতে থাকে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশীয় কোম্পানীর বাজার হিস্যা ১০ শতাংশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে এবং বহুজাতিক বা বিদেশী কোম্পানীর বাজার হিস্যা ৯০ শতাংশের বেশী। তখন দেশীয় কোম্পানীগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরে, সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবৎসরে নিম্নস্তরে মূল্য বিভাজন করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সিগারেটের প্রতি শলাকার দামের মধ্যে নূন্যতম ১ টাকা পার্থক্য রেখে দাম নির্ধারণ করে বিশেষ আদেশ জারী করে।
পরবর্তীতে, ২০১৮-১৯ অর্থবৎসরে অনুমোদিত বাজেটে নিম্নস্তরে বাজারজাতকৃত বিদেশী কোম্পানীর আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র্যান্ড মধ্যম স্তরে উন্নীত করে, নিম্নস্তর শুধুমাত্র দেশীয় কোম্পানীর দেশীয় সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু এখনো উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফলে দেশীয় সিগারেট কোম্পানীসমূহ আরও বাজার হারিয়ে ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়ার পথে।
আবদুল আউয়াল মোহন বলেন, নিম্নস্তরে গত ১৫ বৎসরে প্রায় ৬৪২% সিগারেটের দাম বাড়ানো হয় এবং করভার বাড়ে ১১৫৪%। যার ফলে ২০১৭-১৮ সাল পরবর্তীতে দেশের বাজার চোরাচালান এবং নকল, ব্যবহৃত ব্যান্ডরোলের মাধ্যমে তৈরী অবৈধ সিগারেটে সয়লাব হয়ে যায়। এতে সরকার প্রতি বৎসর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে সিগারেট উৎপাদনকারী মালিক সমিতি বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের গোচরে আনার চেষ্টা করে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমদ, এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাবনা দেন, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবর আলী, জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী, ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক অ্যাসোসিয়েশনের চৌধুরী জাফর, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমদ সোলেমান, ছালামত আলী প্রমুখ।
ধন্যবাদ বক্তব্য দেন চেম্বারের সহ সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর